ধ্বনি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

আজকে আমরা জানতে চলেছি বাংলা ব্যাকরণের একটি প্রধান উৎস ধ্বনি সম্পর্কে যা প্রতিটি বাক্য তৈরি করতে সাহায্য করে, নিচে ধ্বনি সম্পর্কে,ধ্বনি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? আলোচনা করা হলো:

ধ্বনি কি/কাকে বলে

শব্দের যে রূপ বায়ু মাধ্যমে প্রবাহিত হয় তাকে ধ্বনি বলে।। ধ্বনি উৎপাদনের জন্য বাতাসকে তরঙ্গিত করতে হয়। এই তরঙ্গগুলি বাতাসের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং মানুষের কানে পৌঁছলে আমরা তা শব্দ হিসেবে শুনি।

ধ্বনি কাকে বলে

বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্টি হওয়া শব্দকে বলে ধ্বনি। ধ্বনি উৎপন্ন হয় মানুষের বাকযন্ত্রের মাধ্যমে। মানুষের বাকযন্ত্রে বিভিন্ন অঙ্গ থাকে যা ধ্বনি উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। এসব অঙ্গের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, নাক, মুখ ও জিহ্বা।

ধ্বনি সৃষ্টিতে বাগ্ যন্ত্র

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ থেকে বাতাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হয়। আর যে অঙ্গটি এই কাজটি করতে সাহায্য করে সেটি হলো আমাদের ফুসফুস। কোন শব্দ বা ধ্বনি উৎপন্ন করার জন্য এই শ্বাসবায়ুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফুসফুস ছাড়াও আরও অনেক বাগ্ যন্ত্র রয়েছে। আমাদের শরীরের সেইসব বাগ্ যন্ত্র গুলি হল:

  • ফুসফুস
  • শ্বাসনালি
  • খাদ্যনালী
  • আদমের আপেল
  • স্বরযন্ত্র
  • আল জিভ
  • জিভ
  • অধর
  • ওষ্ঠ
  • মূর্ধা
  • শক্ত তালু
  • নাসিকা
  • নাসারন্ধ্র
  • দন্ত

ফুসফুস থেকে শ্বাস বায়ু বেরিয়ে শ্বাস নালীর মধ্যে দিয়ে মুখবিবরে পৌঁছায়। এখানে রয়েছে ছোট নলের মতো অংশ যা স্বরযন্ত্র নাম পরিচিত। কোনো শব্দ কতটা পরিমান গম্ভীর হবে তা এই স্বরযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। এর গঠন খুবই জটিল প্রকতির হয়। এই স্বর যন্ত্রে রয়েছে স্বর তন্ত্রী যাতে বায়ুর দ্বারা কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং আওয়াজ বা ধ্বনির উৎপত্তি হয়।

ধ্বনি কাকে বলে

এর পরের অংশটি হল কণ্ঠনালি। আমাদের খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি এই অংশে এসে মিলিত হয়েছে। এর পরের অংশগুলো পরপর মিলিত হয়ে আমাদের পুরো বাগ্ যন্ত্র তৈরী করেছে।

বাগ্ যন্ত্রের ক্রিয়াশীলতা ও গঠন বৈশিষ্ট অনুসারে বিভিন্ন অংশকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন যেমন:

ধ্বনি প্রকারভেদ

ধ্বনিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ

  1. স্বরধ্বনি
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি

স্বরধ্বনি হলো এমন কিছু ধ্বনি যা উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ু মুখের মধ্য দিয়ে অবাধে প্রবাহিত হয়। এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণের জন্য মুখের কোনো অঙ্গের সাথে বাধা সৃষ্টি হয় না।

বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা ১১টি যথাঃ অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ,ঐ, ও, ঔ

স্বরধ্বনি এর প্রকারভেদ

স্বরধ্বনি সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ

  1. মৌলিক স্বরধ্বনি
  2. যৌগিক স্বরধ্বনি

মৌলিক স্বরধ্বনিঃ  যে স্বরধ্বনি কে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ অ, আ, ই, উ,এ্যা

যৌগিক স্বরধ্বনিঃ যে স্বরধ্বনি দুটি স্বরধ্বনি মিলে হয় তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ ঐ,ঔ

উচ্চারণের প্রকারভেদের কারণে সৃষ্ট স্বরধ্বনি

বাংলা স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ের প্রকারভেদের কারণে স্বরধ্বনিগুলোকে কিছু ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।

  • হ্রস্বস্বর
  • দীর্ঘস্বর
  • প্লুতস্বর

হ্রস্বস্বরঃ যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার কম হয়, সেই সকল স্বরধ্বনিকে হ্রস্বস্বর বলা হয়।

বাংলা ভাষায় মাত্র তিনটি হ্রস্বস্বর আছে। যেমনঃ

দীর্ঘস্বরঃ যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার বেশি হয়, উচ্চারণের সময় ও কাহিনীটা বেশি লাগে। সেই সকল স্বরধ্বনিকে দীর্ঘস্বর বলা হয়।

বাংলা ভাষায় মোট সাতটি দীর্ঘস্বর আছে। যেমনঃ

প্লুতস্বরঃ যে কোনো স্বরধ্বনিকে আমাদের বিভিন্ন দরকারে অনেক্ষন টানা উচ্চারণ করে চললে যে ধ্বনির সৃষ্টি হয় তাকে প্লুতস্বর বলে।এই প্লুতস্বর তখনই সৃষ্টি হয় যখন আমরা গান করি বা কিছু দূরে থাকা কাউকে জোরে জোরে ডাকি।

ব্যঞ্জনধ্বনি

ব্যঞ্জনধ্বনি হল সেই ধ্বনি যা উচ্চারণকালে ফুসফুস থেকে নিঃসারিত বায়ু মুখ দিয়ে বের হবার সময় পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাধা পায়, ঘর্ষণ পায়, অথবা সংকুচিত হয়।যেমনঃ “প” ধ্বনিটি দুই ঠোঁটে বাধা পেয়ে উচ্চারিত হয় ইত্যাদি। অন্যভাবে বলা যায় যে অন্য ধ্বনি সাহায্য নিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

ধ্বনি কাকে বলে
ধ্বনি কাকে বলে

ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ

ব্যঞ্জনধ্বনি ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এই শ্রেণীবিভাগকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ

  • উচ্চারণ স্থান
  • উচ্চারণ রীত
  • ঘোষ ও অঘোষ

উচ্চারণ স্থানঃ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উচ্চারণ স্থান অনুসারে একে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রধান শ্রেণী গুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

  • ওষ্ঠ্য- ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “প”, “ব”, “ম”।
  • দন্ত্য- দাঁত দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ট”, “ঠ”, “ড”, “ঢ”।
  • তালুয়ি- তালুর বিভিন্ন অংশ দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ত”, “থ”, “দ”, “ধ”, “ন”, “ল”।
  • মূর্ধন্য- মূর্ধন্য দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “র”।
  • কণ্ঠ্য- কণ্ঠনালী দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ক”, “খ”, “গ”, “ঘ”, “ঙ”।
  • নাসিক্য- নাক দিয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ম”, “ন”।

উচ্চারণ রীতিঃ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উচ্চারণ রীতি অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এর প্রধান শ্রেণীগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

  • উচ্চারণরীতি- ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উচ্চারণরীতি অনুসারেও বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে প্রধান শ্রেণীগুলি হল:
  • ব্যঞ্জন- বাধাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “প”, “ট”, “ক”।
  • ঘর্ষণধ্বনি- ঘর্ষণযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ফ”, “স”।
  • নাসিক্যধ্বনি- নাকের মধ্য দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসার ফলে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ম”, “ন”।

ঘোষ-অঘোষঃ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরযন্ত্রের কম্পন অনুসারেও বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে প্রধান শ্রেণীগুলি হল:

  • ঘোষ- স্বরযন্ত্র কম্পিত হয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “প”, “ট”, “ক”।
  • অঘোষ- স্বরযন্ত্র কম্পিত না হয়ে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন, “ফ”, “স”, “খ”, “ঘ”।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *