বাংলা সাহিত্যের জনক কে

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুবই প্রাচীন সঠিকভাবে বলা সম্ভব না বাংলা সাহিত্যের জনক কে? আমরা নিচের তথ্যের আলোকে জানতে পারবো বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে।

বাংলা সাহিত্যের জনক কে

বাংলা সাহিত্যের জনক হিসেবে একজনকে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, কারণ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুবই দীর্ঘ এবং বিস্তৃত। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সাহিত্যিকের অবদানের জন্য তাদেরকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তবে, বাংলা সাহিত্যের গদ্যের জনক হিসেবে সাধারণত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ধরা হয়। তিনি বাংলা গদ্যকে একটি সুসংগঠিত ও সুন্দর মাধ্যমে পরিণত করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যের জনক কে

আবার, আধুনিক বাংলা উপন্যাসের জনক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক সব মিলিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন। সুতরাং, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক সাহিত্যিকের অবদান রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জনক হিসেবে পরিচিত।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস কোনটি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে সাধারণত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত” দুর্গেশনন্দিনী” উপন্যাসটিকে ধরা হয় । ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি বাংলা গদ্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল এবং বাংলা উপন্যাসকে একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল ।

দুর্গেশনন্দিনীকে সার্থক উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করার কারণঃ

  • এই উপন্যাসে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতিসহ নানা বিষয়কে স্পর্শ করা হয়েছে। কাহিনীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক এবং চরিত্রগুলো বাস্তবসম্মত।
  • বঙ্কিমচন্দ্র সরল ও সাবলীল ভাষায় উপন্যাসটি লিখেছেন, যা সাধারণ পাঠকদের কাছে বোধগম্য করে তুলেছে।
  • এই উপন্যাসে সমাজের নানা প্রকার অসঙ্গতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র।
  • উপন্যাসটিতে ভারতীয় ইতিহাসের কিছু ঘটনাকে কাহিনীর সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে, যা পাঠকদের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং দীর্ঘ। অনেক বাঙালি সাহিত্যিকের অবদানে এই সাহিত্য ধারা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। এই দীর্ঘ ইতিহাসকে আরও ভালোভাবে বুঝতে, তাকে সাধারণত তিনটি মূল সময়কালে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনটি ভিন্ন যুগে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয়।

ভাগ তিনটি হলঃ

প্রাচীন যুগঃ এই যুগে চর্যাপদ সাহিত্যের উদ্ভব হয়েছিল।
মধ্যযুগঃ এই যুগে বৈষ্ণব সাহিত্যের উন্নতি ঘটেছিল।
আধুনিক যুগঃ এই যুগে বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের মাত্রা পায়।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)

  • বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ বলা হয়। এই যুগের একমাত্র নিদর্শন হল চর্যাপদ।
  • চর্যাপদ মূলত একটি গানের সংকলন। একে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগীতিও বলা হয়। এই গানগুলো রচনা করেছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়াগণ।
  • চর্যাপদে মোট ২৩ বা ২৪ জন কবির রচিত ৫০ বা ৫১টি পদ পাওয়া যায়।
  • চর্যাপদের পদগুলো সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষায় লেখা। এই ভাষা আধুনিক বাংলা, অসমীয়া, ওড়িয়া ভাষার সাথে মিল আছে।
  • পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে এটি আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়।
  • আধুনিক ছন্দের বিচারে চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
  • চর্যাপদ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রথম পদটি লুইপার লেখা।
  • চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এটি বাংলা ভাষার উৎপত্তি এবং বিকাশ সম্পর্কে আমাদের অনেক তথ্য দেয়। চর্যাপদের আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গবেষণায় একটি মাইলফলক।

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)

তুর্কি আক্রমণের ফলে বাংলাদেশে এক অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই সময়কালে মানুষের জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সাহিত্য চর্চার জন্য তেমন সুযোগ থাকে না। ফলে এই সময়কে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘অন্ধকার যুগ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই সময়ে যেসব সাহিত্যকর্ম পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত সংস্কৃত ভাষায় রচিত। যেমন, ‘শূন্যপুরাণ’। এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন রামাই পণ্ডিত।

মধ্যযুগ

অন্ধকার যুগের পর বাংলা সাহিত্যে নতুন জাগরণ শুরু হয়। এই সময়কালকে মধ্যযুগ বলা হয়। মধ্যযুগকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  • এই যুগে বাংলা সাহিত্যে ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবন শুরু হয়।
  • শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন ও দর্শন এই যুগের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
  • শ্রীচৈতন্যদেবের মৃত্যুর পর এই যুগে বৈষ্ণব সাহিত্যের আরও উন্নতি হয়।

বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ (১৮০১ – বর্তমান)

সাহিত্যের আধুনিক যুগটি ১৮০১ সাল থেকে শুরু হয়ে বর্তমান পর্যন্ত চলছে। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের মূলধারায় প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধারায় সমৃদ্ধ হয়। এই যুগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলঃ

  • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ তিনি বাংলা উপন্যাসের জনক হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।
  • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ তাঁর লেখা ‘পথের দাবী’ উপন্যাসটি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, যা তাঁর সাহিত্যিক জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ তিনি বাংলা ছোটগল্পের জনক হিসেবে পরিচিত। ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট. উপাধি প্রদান করে। তিনি তাঁর ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেছিলেন।
  • কাজী নজরুল ইসলামঃ তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পের নাম ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’।
    আরজ আলী মাতুব্বরঃ তিনি লৌকিক দার্শনিক হিসেবে খ্যাত।
  • আবুল ফজলঃ তাঁকে ‘মুক্তবুদ্ধির চির সজাগ প্রহরী’ বলা হয়।
  • বুদ্ধদেব বসুঃ রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়।
  • মাইকেল মধুসূদন দত্তঃ তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্র্যাজেডি নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’ রচনা করেন।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা / প্রথম মুসলিম কবি কে

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী ষোড়শ শতাব্দী। এই কবি তার পিতার আদেশে বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন। এছাড়াও আরো অন্যান্য কাব্য রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি হলেন কায়কোবাদ। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগে কবিতা লেখার ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম মুসলিম ছিলেন এবং এই অবদানের জন্য তাকে ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *