বাক্য কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
বাংলা ব্যাকরণের মূল উপকরণ হচ্ছে বাক্য। আজকে আমরা জানতে পারবো বাক্য কাকে বলে, বাক্য কত প্রকার ও কি কি, উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো…বাক্য কাকে বলে
বাক্য কাকে বলে
যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে। ডক্টর সুনীতি কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে “পরস্পর অর্থসম্বন্ধবিশিষ্ট যে পথগুলো দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায় সে পদ গুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে”।
বাক্যকে ভাষার মৌলিক একক বলা হয়। বাক্য গঠনের জন্য শব্দের সমন্বয় প্রয়োজন হয়। শব্দের মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাক্য গঠিত হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, বাক্য হল এক বা একাধিক শব্দের সমষ্টি যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- সে স্কুলে যায়,
- রহিম ক্রিকেট খেলছে,
- আমি বই পড়ছি
বাক্যের প্রকারভেদ
প্রতিটি বাক্য দুটি অংশে বিভক্ত। যথাঃ
- উদ্দেশ্য
- বিধেয়
উদ্দেশ্য
একটি বাক্যে যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে।
- সে স্কুলে যায়। এখানে “সে” হলো উদ্দেশ্য।
- রহিম ক্রিকেট খেলছে। এখানে “রহিম’’ হলো উদ্দেশ্য।
- আমি বই পড়ছি। এখানে “আমি’’ হলো উদ্দেশ্য।
উপরের উদাহরণে, “সে”, “রহিম’’,“আমি’’ হলো উদ্দেশ্য। কারণ এদের সম্বন্ধে কিছু বলা হয়েছে।
বিধেয়
বাক্যে উদ্দেশ্যে সম্পর্কে কিছু বলা হলে তাকে বিধেয় বলে। বিধেয় সাধারণত ক্রিয়া পদ দ্বারা প্রকাশিত হয়।
- সে স্কুলে যায়। এখানে “স্কুলে যায়” হলো বিধেয়।
- রহিম ক্রিকেট খেলছে, এখানে “ ক্রিকেট খেলছে’’ হলো বিধেয়।
- আমি বই পড়ছি এখানে “বই পড়ছি’’ হলো বিধেয়।
উপরের উদাহরণে, “স্কুলে যায়”, “ক্রিকেট খেলছে’’,“বই পড়ছি’’ হলো উদ্দেশ্য। কারণ এখানে উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে।
গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ
গঠন অনুসারে বাক্য কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
- সরল বাক্য
- জটিল বাক্য / মিশ্র বাক্য
- যৌগিক বাক্য
সরল বাক্য
যে বাক্যে একটি উদ্দেশ্য এবং একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। অথবা, যে বাক্যে একটি মাত্র প্রধান বাক্যাংশ থাকে তাকে সরল বাক্য বলে।
রহিম ক্রিকেট খেলছে। এখানে “রহিম’’ হলো উদ্দেশ্য এবং “ক্রিকেট খেলছি” হল সমাপিকা ক্রিয়া।
আমি বই পড়ছি। এখানে “আমি’’ হলো উদ্দেশ্য এবং “বই পড়ছি’’ হলো সমাপিকা ক্রিয়া।
জটিল বাক্য / মিশ্র বাক্য
যে বাক্যে একটি সরল বাক্য এবং এক বা একাধিক খন্ড বাক্য থাকে তাকে জটিল বাক্য / মিশ্র বাক্য বলে। জটিল বাক্যে দুই বা ততোধিক কর্তা বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। জটিল খন্ড বাক্যে ‘যে’, ‘সে’, ‘যিনি’, ‘তিনি’, ‘তথাপি’, ‘যদিও’, ‘তবে’, ‘যখন’, ‘তখন’ ইত্যাদি থাকে।
- যে রাধে সে চুলও বাঁধে। এখানে সে চুল ও বাঁধে একটি সরল বাক্য এবং যে রাধে খন্ড বাক্য।
- যেমন কর্ম তেমন ফল । এখানে যেমন কর্ম একটি সরল বাক্য এবং তেমন ফল খন্ড বাক্য।
- আমি জানি যে তুমি মিথ্যাবাদী নও। এখানে আমি জানি একটি সরল বাক্য এবং যে তুমি মিথ্যাবাদী নও খন্ড বাক্য
যৌগিক বাক্য
যখন পরস্পর নিরপেক্ষ দই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য মেরে তো হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করে কখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যৌগিক বাক্যে ‘অথচ’, ‘কিন্তু’, ‘বরং’, ‘ও’, ‘এবং’, ‘আর’ এরকম অব্যয়ের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করে।
- তার টাকা আছে, কিন্তু দান করেন না।
- বিপদ এবং দুঃখ একই সাথে আসে।
- লোকটি গরিব কিন্তু সৎ।
অর্থ অনুসারে বাক্য
বাক্যকে অর্থ অনুসারে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
- নির্দেশক বাক্য
- প্রশ্নবোধক বাক্য
- অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
- বিস্ময়সূচক বাক্য
- প্রার্থনা সূচক বাক্য
নির্দেশক বাক্য
কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের তথ্য যে বাক্য দ্বারা প্রকাশ পায় তাকে নির্দেশক বাক্য বলে
- নাদিয়া একটি কবিতা পড়ছে
- রহিম পড়ার সময় পড়ে আর খেলার সময় খেলে
নির্দেশক বাক্য কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়
- হ্যাঁ বোধক / অস্তিবাচক
- না বোধক / নেতিবাচক
প্রশ্নবোধক বাক্য
যে বাক্যে কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্য সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে।
- ইমন কি খেয়েছে?
- হাসিব কোথায় যাচ্ছে?
অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
যে বাক্য দ্বারা আজ্ঞা, আদেশ, উপদেশ অনুরোধ অনুমতি আমন্ত্রণ নিষেধ বোঝায় তাকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে।
- অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর
- তুমি এখন যেতে পারো
- দুই দিনের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করবে
বিস্ময়সূচক বাক্য
বিস্ময়, দুঃখ, শোক, কাতরতা করোনা প্রশংসা ইত্যাদি মনোভাব আবেগ বা উচ্ছ্বাসের আকস্মিকতা নিয়ে যে বাক্য প্রকাশ পায় তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে।
- উঃ, প্রচন্ড শীত!
- ছি-ছি, এ কাজ মানুষ করে!
প্রার্থনা সূচক বাক্য
বক্তার মানসিক ইচ্ছা বা প্রার্থনা যে বাক্যে প্রকাশ পায় তাকে প্রার্থনা সূচক বাক্য বলে।
- তুমি যেন সফল হতে পারো
- হে প্রভু মুক্তি দাও
গুণ অনুসারে বাক্য
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকে। যথাঃ
- আকাঙ্ক্ষা
- আসক্তি
- যোগ্যতা
আকাঙ্ক্ষা
অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য একটি পদ শোনার পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছে থাকে তাকে আকাঙ্ক্ষা বলে।
- ‘‘করিম স্কুলে” এখানে বাক্যে বক্তার মনের ভাব পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, আরো কিছু শোনার ইচ্ছে থাকে। কিন্তু যদি বলা হয় করিম প্রতিদিন স্কুলে যায় এখানে বাক্যে বক্তার সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ পায়
আসক্তি
বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর সুশৃংখল পদবিন্যাস কে আসক্তি বলে।
- আমি করি চেষ্টা পড়ার ওয়াক্ত পাঁচ নামাজ
এখানে বক্তা যা বলতে চেয়েছেন সব উপকরণগুলো এখানে আছে। কিন্তু পথ গুলো সুশৃংখল ভাবে সাজানো হয়। ফলে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়নি।
- আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি
এখানে বাক্যে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়।
যোগ্যতা
বাক্যের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা।
- বর্ষার রৌদ্র প্লাবন সৃষ্টি করে এ বাক্যটি ভাব প্রকাশের যোগ্যতা হারিয়েছে কারণ রৌদ্রে প্লাবন হয় না, প্লাবন হয় বৃষ্টিতে। যদি বলা হয় বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবন সৃষ্টি করে তবে একটি যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য হবে কারণ পদে অর্থগত ও ভাবগত মিল রয়েছে
খুব সহজভাবে বাক্যের প্রতিটি বিষয় লেখা হয়েছে আমি খুব ভালোভাবে সকল বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছি ধন্যবাদ এরকম পয়েন্ট ও ছক আকারে বাক্যের প্রতিটি বিষয় তুলে ধরার জন্য
আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ, আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে banglaquestion.com এর সাথে থাকুন ❤