গতি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা তোমাদের মাঝে বৈজ্ঞানিকভাবে নতুন একটি তথ্য নিয়ে হাজির হলাম যার নাম হল গতি। আমরা গতি বলতে কোন একটি বস্তুর স্থান্তরকে বুঝি তাহলে আজকে আমরা জানতে পারবো গতি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি? সুতরাং জেনে নেওয়া যাক গতি কাকে বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

গতি কাকে বলে । what is motion

জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন ব্যক্তি বা বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনকে গতি বলে। পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের হারকে গতি বা বেগ বলে। যেমনঃ

  • গাড়ি রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলছে (সমান গতি, রৈখিক গতি)।
  • পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘোরে (সমান গতি, বৃত্তাকার গতি)।
  • ঝুলন্ত ঘড়ির পেন্ডুলাম এগিয়ে-পিছে দুলছে (সরল স্পন্দন গতি)।

গতি কাকে বলে

গতির সূত্র

প্রথম সূত্রঃ কোন একটি স্থির বস্তুর উপর বাহ্যিকভাবে বল প্রযুক্ত না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতে থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্রঃ নির্দিষ্ট সময়ের সাথে কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন ঠিক সেদিকেই ঘটে। এই তথ্য মতে, F = ma। যেখানে, F = প্রযুক্ত বলm = বস্তুর ভর এবং a = ত্বরণ।
তৃতীয় সূত্রঃ প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। যখন একটি বস্তু অপর কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন অপর বস্তুটিও প্রথম বস্তুর উপর একই মানের বিপরীতমুখী বল ক্রিয়া করে।

গতির প্রকারভেদ

সাধারণত গতি ৫ প্রকার। যেমন-

  • চলন গতি
  • ঘূর্ণন গতি
  • জটিল গতি
  • দোলন গতি
  • পর্যায়বৃত্ত গতি

চলন গতি

চলন গতি হলো এমন ধরণের গতি যেখানে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে। সহজ কথায়, যদি আপনি টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে একটি বই বা অন্য কোন বস্তু টেনে নিয়ে যান এবং বইটির বা বস্তুর প্রতিটি কণা একই সময়ে একই দূরত্ব অতিক্রম করে, তাহলে বইটির বা বস্তুর গতি চলন গতি হবে।

বৈশিষ্ট্য

  • বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে চলতে থাকে।
  • বস্তুর সকল কণা সমান দূরত্ব অতিক্রম করে।
  • বস্তুর কোন ঘূর্ণন থাকে না।
  • বস্তুর বেগ স্থির থাকে।

উদাহরণ

  • টেবিলের উপর একটি বই টেনে নিয়ে যাওয়া।
  • রাস্তায় সরলরেখায় গাড়ি চালানো।
  • ট্রেন লাইনে ট্রেন চলা।
  • লিফট উপরে বা নিচে যাওয়া।

ঘূর্ণন গতি

যে গতি কোন বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই অক্ষের চারদিকে ঘোরে তাকে ঘূর্ণন গতি বলে। সহজ কথায়, যদি আপনি একটি চাকা ঘোরান, চাকার প্রতিটি কণা একই সময়ে একই অক্ষের চারদিকে ঘোরে। এই ঘোরার গতিকে ঘূর্ণন গতি বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য

  • বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই অক্ষের চারদিকে ঘোরে।
  • বস্তুর কণাগুলো সমকেন্দ্র বৃত্তপথে চলে।
  • বস্তুর কোন স্থানান্তর হয় না।
  • বস্তুর বেগ কৌণিক বেগ দ্বারা নির্ধারিত হয়।

উদাহরণ

  • একটি চাকা ঘোরা।
  • পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘোরা।
  • ছাতা বাতাসে ঘোরা।
  • একটি পাখার ডানা ঘোরা।

জটিল গতি

একই সময়ে একাধিক ধরণের গতির সমন্বয়ে গঠিত গতিই জটিল গতি । যখন কোন বস্তু একই সময়ে একটির বেশি পথে চলে, তখন সেই বস্তুর গতিকে জটিল গতি বলা হয়।

 উদাহরণ

  • একটি গাড়ি যখন রাস্তায় ঘোরে: গাড়িটি রাস্তার বাঁক অনুসারে বক্ররেখায় চলে (বক্ররেখা গতি) এবং তার চাকা ঘোরে (বৃত্তাকার গতি)।
  • একটি ঝুলন্ত লটকানো ঘড়ির পেন্ডুলাম: পেন্ডুলামটি এগিয়ে-পিছে দুলছে (সরল স্পন্দন গতি) এবং পৃথিবীর সাথে ঘোরে (বৃত্তাকার গতি)।
  • একটি চাকা যখন গড়িয়ে যায়: চাকাটি এগিয়ে গড়িয়ে যায় (রৈখিক গতি) এবং তার সাথে সাথে ঘোরেও (বৃত্তাকার গতি)

বৈশিষ্ট্য

  • জটিল গতিতে বস্তু একই সময়ে একাধিক পথে চলে।
  • বস্তুর গতি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে (যেমন: রৈখিক, বৃত্তাকার, স্পন্দন)।
  • জটিল গতির বিশ্লেষণ করা তুলনামূলকভাবে জটিল।

দোলন গতি

দোলন গতি হলো এমন ধরণের গতি যেখানে বস্তু একই স্থানের চারপাশে বারবার এগিয়ে-পিছে বা উপরে-নিচে চলে। যদি আপনি একটি ঝুলন্ত লটকানো ঘড়ির পেন্ডুলামকে এগিয়ে-পিছে দুলান, তাহলে পেন্ডুলামের এই গতিকে দোলন গতি বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য

  • বস্তু একই স্থানের চারপাশে বারবার এগিয়ে-পিছে বা উপরে-নিচে চলে।
  • বস্তুর সরণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
  • বস্তুর বেগ সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান ধারণ করে।
  • বস্তুর ত্বরণ সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান ধারণ করে।
  • দোলন গতি পুনরাবৃত্তিমূলক।

উদাহরণ

  • ঝুলন্ত লটকানো ঘড়ির পেন্ডুলামের গতি
  • একটি ঝুলন্ত স্প্রিংয়ের গতি
  • একটি ঝুলন্ত দড়ির ঢেউয়ের গতি
  • একটি শব্দের তরঙ্গের গতি
  • আলোর তরঙ্গের গতি

পর্যায়বৃত্ত গতি

যে গতিতে কোন বস্তু নির্দিষ্ট সময় পর পর একই পথে একই দিকে ফিরে আসে তাকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। যদি আপনি একটি ঝুলন্ত লটকানো ঘড়ির পেন্ডুলামকে এগিয়ে-পিছে দুলান, এবং পেন্ডুলামটি প্রতিবার একই দূরত্ব এগিয়ে-পিছে দুললে, তাহলে পেন্ডুলামের এই গতিকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য

  • বস্তু নির্দিষ্ট সময় পর পর একই পথে একই দিকে ফিরে আসে।
  • বস্তুর গতি পুনরাবৃত্তিমূলক।
  • বস্তুর কোন ঘূর্ণন থাকে না।
  • বস্তুর বেগ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
  • বস্তুর ত্বরণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।

উদাহরণ

  • ঝুলন্ত লটকানো ঘড়ির পেন্ডুলামের গতি
  • একটি ঝুলন্ত স্প্রিংয়ের গতি
  • একটি ঝুলন্ত দড়ির ঢেউয়ের গতি
  • একটি চাকা ঘোরা
  • পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘোরা
  • গ্রহগুলো সূর্যের চারদিকে ঘোরা

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ গতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হল

সরল গতি কাকে বলে

সরল গতি বলতে বোঝায় কোন বস্তু যখন একই সরলরেখায় এবং একই বেগে চলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি সরাসরি রাস্তায় চলছে এবং গাড়ির স্পিডোমিটারে একেই বেগে(৫০km/h) দেখায়, তবে ওই গাড়িটির গতিকে সরল গতি বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • একই সরলরেখায় চলে।
  • বেগ স্থির থাকে।
  • ত্বরণ শূন্য থাকে।
  • যে বস্তুর গতিপথ সরলরেখা।

আহ্নিক গতি কাকে বলে

সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণনের সাথে সাথে পৃথিবী নিজ অক্ষের উপরেও ঘুরছে, ঠিক যেমন একটি লাটিম ঘুরে। এই ঘূর্ণনকেই আমরা আহ্নিক গতি বলি। পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে আমাদের দিন-রাত হয়। পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সেখানে দিন হয়, আর যে অংশ সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে না সেখানে রাত হয়। আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর দুই মেরু (উত্তর ও দক্ষিণ) চ্যাপ্টা এবং বিষুবরেখা ফুলে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আলো বিভিন্ন কোণে পড়ে, এর ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়।

বৈশিষ্ট্য

  • পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে।
  • একবার ঘুরতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয়।
  • এই ঘূর্ণনের ফলে আমাদের দিন-রাত হয়।
  • পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় হয়।

বক্র গতি কাকে বলে

বক্র গতি বলতে বোঝায় কোন বস্তু যখন সরলরেখায় না গিয়ে বক্ররেখায় চলে এবং ভিন্ন ভিন্ন বেগে চলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি যেকোনো রাস্তায় চলছে এবং গাড়ির স্পিডোমিটারে ভিন্ন ভিন্ন বেগে(৫০, ৬০,৭০,৬৫km/h) দেখায়, তবে ওই গাড়িটির গতিকে বক্র গতি বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • বস্তুর দিক এবং দ্রুতি নিরবচ্ছিন্তে পরিবর্তিত হয়।
  • বক্র গতির জন্য ত্বরণ প্রয়োজন। ত্বরণ হলো বস্তুর বেগের পরিবর্তনের হার।
  • বক্র গতির গাণিতিক বিশ্লেষণ জটিল হতে পারে কারণ এতে দিক এবং দ্রুতির পরিবর্তন জড়িত থাকে।
  • পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে

পরিশেষে বলা যায়, গতি হলো সময়ের সাথে সাথে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন। গতি সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জানতে চাইলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানতে পারেন অথবা যেকোনো তথ্য জানতে চাইলে জানাতে পারেন ধন্যবাদ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *