কারক ও বিভক্তি কাকে বলে?
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকে আমরা তোমাদের মাঝে নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম তা হল কারক ও বিভক্তি কাকে বলে ।তাই আজকে আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব আশা করি আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কারক ও বিভক্তি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
কারক কাকে বলে
কারক হলো বাংলা ব্যাকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মূলত একটি ক্রিয়া এবং বিশেষ্য বা সর্বনামের মধ্যকার সম্পর্ককে নির্দেশ করে। সহজ কথায় বলতে গেলে, কোন কাজ কে করে, কার উপর করে, কোন যন্ত্র দিয়ে করে ইত্যাদি সম্পর্ক বোঝাতেই কারক ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
- রহিম ভাত খায়। (রহিম কে? কৃতকারক)
- করিম খেলাধুলা করে। (কি করে? কর্মকারক)
- রহিম চামচ দিয়ে চা খায়। (কি দিয়ে? করণ কারক)
কারকের প্রকারভেদ
কারককে সাধারণত ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ
- কৃতকারক
- কর্মকারক
- করণ কারক
- সম্পাদন কারক
- অপাদান কারক
- অধিকরণ করক
কৃতকারক
যে ব্যক্তি বা বস্তু কোনো কাজ করে, তাকে কর্তৃকারক বলে। (রহিম ভাত খায়)
কর্মকারক
যে ব্যক্তি বা বস্তুর উপর কাজ করা হয়, তাকে কর্মকারক বলে। (করিম মাঠে ফুটবল খেলে)
করণ কারক
কোনো কাজ করার জন্য যে যন্ত্র বা উপকরণ ব্যবহৃত হয়, তাকে করণ কারক বলে। (রহিম চামচ দিয়ে চা খায়)
সম্পাদন কারক
যে ব্যক্তির জন্য কোনো কাজ করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। (আমি তাকে একটি বই দিলাম। (তাকে = সম্প্রদান কারক)
অপাদান কারক
কোন বস্তু কোন বস্তু থেকে তৈরি, তাকে অপাদান কারক বলে। (কাঠ থেকে মেজ তৈরি হয়।)
অধিকরণ করক
কোন কাজটি কোন স্থানে, সময়ে বা বিষয়ে হয়, তাকে অধিকরণ কারক বলে।( ঘরে বসে আমি পড়াশোনা করি)
বিভক্তি কাকে বলে
বিভক্তি হলো একপ্রকার গুচ্ছ বর্ণ, যারা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সম্পর্ক সাধনের জন্য যুক্ত হয়।
সহজ করে বললে, বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক বোঝাতে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, এই লগ্নকগুলোই বিভক্তি নামে পরিচিত। এই বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদ-এর সাথে নামপদ-এর সম্পর্ক স্থাপন করে।
উদাহরণঃ
- ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। (এই বাক্যটিতে ছাদে শব্দটি ‘ছাদ‘ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যোগ করে হয়েছে। অর্থাৎ, ছাদে = ছাদ + এ। এখানে “এ” হচ্ছে বিভক্তি।)
বিভক্তির প্রকারভেদ
বিভক্তিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ
- শব্দ বা নাম বিভক্তি
- ক্রিয়া বা ধাতু বিভক্তি
শব্দ বা নাম বিভক্তি
শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি হলো এমন কিছু বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যা শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি শব্দকে বিভিন্ন কারকে পরিণত করে। যেমনঃ
- রাম গাড়ি চালায়।
- রামকে আমি চিনি।
উপরের দুটি বাক্যে ‘রাম’ শব্দের পরে দুটি ভিন্ন বিভক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম বাক্যে ‘রাম’ কর্তা, আর দ্বিতীয় বাক্যে ‘রাম’ কর্ম। বিভক্তিগুলোই এই পার্থক্য তৈরি করেছে।
- শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। যেমন— প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী। বাংলা সাধারণত যে শব্দ বিভক্তিগুলো ব্যবহৃত হয় যথাঃ
- শূন্য বিভক্তি (০): অনেক সময় কোনো বিভক্তি স্পষ্টভাবে লেখা হয় না, তখন শূন্য বিভক্তি বলে ধরা হয়। উদাহরণ: রাম খেলা করে।
- এ বা -য়: স্থান বা সময় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: বাড়িতে, গতকাল, ঢাকায়।
- তে: স্থান বা অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: ঘরে, বইতে, খাতায়।
- কে: কর্মকারক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: রামকে, সীতাকে।
- রে: কর্মকারক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: তাকে, আমাকে।
- র বা -এর: অধিকরণ কারক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: বাড়ির, বইয়ের, কলমের।
ক্রিয়া বা ধাতু বিভক্তি
ক্রিয়া বিভক্তি হলো ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠনকারী বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি। সহজ কথায়, এটি ধাতুকে কাল, পুরুষ, বাচ্য ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে পরিণত করে। যেমনঃ
- গা ধাতুর সাথে ই বিভক্তি যোগ হয়ে গাই ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।
- খেল ধাতুর সাথে বেন বিভক্তি যোগ হয়ে খেলবেন ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।
বিভক্তির আকৃতি
একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তির আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। নিচে ছকের মাধ্যমে তাদের পার্থক্য দেখানো হলোঃ