কোষ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

কোষ কাকে বলে? কোষ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো নিচে উপস্থাপন করা হলো কোষ কাকে বলে?

কোষ কাকে বলে

কোষ হল জীবের ক্ষুদ্রতম জীবিত একক, একটি কোষ কে আলাদাভাবে জীবিত বলা হয়ে থাকে। সকল জীবদেহের গঠন, বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপ ও বংশগতিমূলক তথ্য বহনকারী একককে কোষ বলে। এজন্যই কোষকে জীবের নির্মাণ একক নামে অভিহিত করা হয়।

কোষের/cell পরিচিতি

Robert Hooke ছিলেন একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী। তিনি ১৬৬৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ছিপির একটি পাতলা সেকশন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি সেখানে মৌমাছির চাকের মতো ছোট ছোট কক্ষ দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি এই কক্ষগুলোকেই “সেল” বা “প্রকোষ্ঠ” নাম দেন। পরবর্তীতে, ডাচ বিজ্ঞানী Antonie van Leeuwenhoek ১৬৭৪ সালে প্রথম জীবিত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি কোষের ভিতরে কোষ প্রাচীর ছাড়াও অন্যান্য কোষীয় সকল উপাদান দেখতে পান।

  • Jean Brachet (1961) এর মত অনুসারেঃ কোষ হলো জীবের গঠনগত মৌলিক একক।
  • Loewy and Siekevitz (1969) এর মত অনুসারেঃ কোষ হলো জীবের জীবন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার একক। এটি একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং নিজের মতো করে বংশবিস্তার করতে পারে।
  • De Roberties (1979) এর মত অনুসারেঃ কোষ হলো জীবের মৌলিক গঠনগত ও কার্যগত একক

কোষ তত্ত্ব

কোষ তত্ত্ব হলো কোষের গঠন ও কাজের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি মতবাদ। এই তত্ত্ব অনুসারে,

  • কোষ হলো জীবের ক্ষুদ্রতম জীবিত একক, যা জীবদেহের গঠন, বিপাক ও বংশগতি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কোষ হলো জীবনের মৌলিক একক। সকল জীব এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত।
  • কোষ বংশগতির একক। নতুন কোষ পূর্বসৃষ্ট কোষ থেকে উৎপন্ন হয়।

কোষের প্রকারভদ

শরীরবৃত্তীয় ও কাজের উপর ভিত্তি করে কোষকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ

  • দেহ কোষঃ যে সকল কোষ জীবদেহের অঙ্গ ও অঙ্গ তন্ত্র গঠন করে তাকে দেহকোষ বলে। দেহ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা জনন কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা থেকে দ্বিগুণ হওয়ায় একটি ডিপ্লয়েড কোষ ও বলা হয়। যেমনঃ স্নায়ু কোষ, মূল, কান্ড ও পাতার কোষ, পেশি কোষ ইত্যাদি।
  • জনন কোষঃ যে সকল কোষ জীবদেহের জনক কাজে অংশ নেয় তাদেরকে জনন কোষ বলে। জনন কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হওয়ায় একে হ্যাপ্লয়েড কোষ ও বলা হয়। যেমনঃ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।

নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  • আদিকোষ
  • প্রকৃত কোষ

আদিকোষ বা আদিকেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotic cell)

  • যেসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয় এবং অন্য কোন অঙ্গানু ও থাকে না তাকে আদি কোষ বলে।
  • Prokaryotic cell শব্দটি এসেছে ল্যাটিন (Pro = Before), গ্রিক (Karyon = nut), nucleus অর্থাৎ নিউক্লিয়াস সংগঠনের আগের অবস্থা।

আদিকোষের বৈশিষ্ট্য

  • এতে একমাত্র বৃত্তাকার DNA থাকে যা সাইটোপ্লাজম এ মুক্ত ভাবে অবস্থান করে থাকে।
  • DNA অবস্থানকারী স্থানটি নিউক্লিওয়েড নামে অভিহিত করা হযএ।
  • আদি কোষ দিয়ে গঠিত জীব কে আদিকোষী জীব বলে।
  • এদের রাইবোজোম 70S থাকে
  • এসব কোষ অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়

প্রকৃত কোষ (Eukaryotic cell)

যেসব কোষে আবরণবেষ্টিত নিউক্লিয়াস ছাড়াও আবরণ বেষ্টিত বিভিন্ন ধরনের অঙ্গানু পাওয়া যায় তাকে প্রকৃত কোষ বলে।Eukaryotic cell শব্দটি এসেছে ল্যাটিন eu = good অর্থাৎ আদর্শ + Karyon = nucleus সংগঠিত নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ।

  • প্রাণী কোষঃ কোষের বাইরে কোষপ্রাচীর থাকে না। কোষ গহ্বর অনুপস্থিত বা খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না। সেন্ট্রোসোম থাকে। সঞ্চিত খাদ্য চর্বি ও গ্লাইকোজেন।
  • উদ্ভিদ কোষঃ কোষের বাইরে শক্ত কোষ প্রাচীর থাকে যা সেলুলোজ দিয়ে তৈরি।পরিণত কোষে কেন্দ্রে একটি বড় কোষ গহ্বর থাকে। কোষ গহ্বরের মধ্যে সাইটোপ্লাজম এবং ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। পরিণত কোষের আকার সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকার হয়। সঞ্চিত খাদ্য শ্বেতসার। সাধারণত সেন্ট্রোসোম থাকে না।

কোষ কাকে বলে

প্রকৃত কোষের বৈশিষ্ট্য

  • নিউক্লিয়াসের আবরণটি দিয়ে স্তর বিশিষ্ট এবং এটি নিউক্লিওপ্লাজম ক্রোমোজোম ও নিউক্লিওলাস কে বেষ্টন করে রাখে
  • গুলো লম্বা এবং দুই প্রান্ত বিশিষ্ট
  • এদের রাইবোজোম 80S
  • এসব কোষে মাইটোসিস ও মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়
  • যেমন শৈবাল, ছত্রাক, নগ্নবীজি, এবং সকল প্রাণী কোষ আদর্শ বা প্রকৃত কোষ

আদি কোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্য

আদি কোষ প্রকৃত কোষ
নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নেই নিউক্লিয়ার মেমব্রেন আছে
সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই সুগঠিত নিউক্লিয়াস আছে
ডিএনএ বৃত্তাকার ডিএনএ সুত্রাকার
সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানুর মধ্যে শুধু রাইবোজোম উপস্থিত রাইবোজোম সহ সকল সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানু উপস্থিত থাকে
রাইবোজোমের ধরন 70S (50S + 30S) রাইবোজোমের ধরন 80S (60S + 40S) তবে ক্লোরোপ্লাস্ট ওমাইটোকন্ড্রিয়াতে 70S পাওয়া যায়
অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজন হয় মাইটোসিস ও মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজন হয়
অবাত শ্বসন ঘটে সবাত শ্বসন ঘটে

 

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *