পদার্থ কাকে বলে

ডেমোক্রিটাস একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ছিলেন (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০)। তিনি ধারণা দেন যে পদার্থ অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম একক, এটম নিয়ে গঠিত। আজকে আমরা জানতে পারবো পদার্থ কাকে বলে, পদার্থ কত প্রকার ও কি কি, উদাহরণসহ

পদার্থ কি

আমাদের চারপাশে যে বিভিন্ন জিনিস দেখতে পাই (চেয়ার, টেবিল, মাটি, পানি, বায়ু, লোহা ইত্যাদি) – এগুলো সবই পদার্থ দ্বারা গঠিত। পৃথিবীতে যেকোনো বস্তুই পদার্থ দ্বারা গঠিত। পদার্থ ছাড়া কোনো বস্তুর অস্তিত্ব সম্ভব নয়।

পদার্থ কাকে বলে

যার নির্দিষ্ট ভর এবং আয়তন আছে যা জায়গা দখল করে এবং বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে। যেমনঃ চেয়ার, টেবিল, বাতাস, পানি এবং তেল ইত্যাদি।

পদার্থ হল এমন বস্তু যার ওজন আছে এবং আয়তন দখল করে। ওজন হল পদার্থের পরিমাণ এবং আয়তন হলো দখলকৃত স্থান। এটি এমন বস্তু যা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং বিক্রিয়ার মাধ্যমে পদার্থ গুলির মধ্যে পরমাণুর পুনবিন্যাসের ফলে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য সমূহ

বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে পদার্থের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিচে দেওয়া হল

  • পদার্থের আকার আছে।
  • পদার্থের ভর আছে।
  • এটি জায়গা দখল করে।
  • বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নতুন পদার্থের সৃষ্টি করে।
  • পদার্থকে তাপ দিলে প্রসারিত হয়।
  • একে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব।
  • এটি গঠনের রয়েছে এটম নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা।

পদার্থের প্রকারভেদ

সাধারণত পদার্থকে গঠন ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। পদার্থের প্রকারভেদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে গঠন ও অবস্থার ভিত্তিতে প্রকারভেদসমূহ জানতে হবে।

পদার্থের অবস্থা

সাধারণত পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে। যথাঃ

  • কঠিন পদার্থ
  • তরল পদার্থ
  • বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ

কঠিন পদার্থ

যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার আয়তন এবং দৃঢ়তা আছে তাকে কঠিন পদার্থ বল। এর অনুসমূহ খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব খুবই কম। এ কারণে এর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ অন্যান্য পদার্থের চেয়ে অনেক বেশি। যেমনঃ ইট, বালু, পাথর ইত্যাদি।

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন
  • এর ভর বা ওজন আছে
  • বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে
  • একে তাপ দিলে তরল পদার্থের প্রসারিত হয়
  • কোন কোন কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে সরাসরি বায়বীয় পদার্থের পরিণত হয় (ন্যাপথালিন)
  • আন্ত আণবিক আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি

তরল পদার্থ

যে পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও ভর আছে কিন্তু আকার নেই তাকে তরল পদার্থ বলে। যে পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে। তরল পদার্থের অনুসমূহ কাছাকাছি অবস্থান করে কিন্তু এর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থের চেয়ে কম। যেমনঃ পানি, তেল ইত্যাদি

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • তরল পদার্থের আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই
  • ভর বা ওজন আছে
  • একে তাপ দিলে বায়বীয় পদার্থের প্রসারিত হয়
  • যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণকার
  • আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থের চেয়ে কম

বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ

যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই তাকে বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ বলে। অনু সমূহ পদার্থের তিন অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে দূরত্বে অবস্থান করে। এর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ খুবই কম। বায়বীয় পদার্থের অনুসমূহ মুক্ত অবস্থায় চলাচল করে। যেমনঃ নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং মিথেন ইত্যাদি।

বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তন নেই
  • এ পদার্থের ওজন আছে
  • অনুসমূহের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ খুবই কম
  • একে ঠান্ডা করলে তরল পদার্থের পরিণত করা যায়

পদার্থের গঠন

গঠনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা

  1. মৌলিক পদার্থ
  2. যৌগিক পদার্থ

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে

যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায় না তাকে মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন হাইড্রোজেন (H₂) পরমাণুকে ভাঙলে শুধুমাত্র ২ অনু হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায় সুতরাং হাইড্রোজেন (H) একটি মৌলিক পদার্থ।

মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • মৌলিক পদার্থকে কঠিন তরল ও বায়বীয় বিভিন্ন অবস্থায় পাওয়া যায়
  • মৌলিক পদার্থের নির্দিষ্ট ভর রয়েছে এবং বিন্যাস করা সম্ভব
  • ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক পদার্থ যুক্ত করার মাধ্যমে যৌগিক পদার্থ পাওয়া সম্ভব
  • মৌলিক পদার্থ সাধারণত ধাতু, অধাতু, উপধাতু এবং নিষ্ক্রিয় মৌল হতে পারে

যৌগিক পদার্থ কাকে বলে

যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে দই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন পানির (H₂O) একটি অণুকে ভাঙলে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু পাওয়া যায়। এখানে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু উভয়ই মৌলিক পদার্থ। সুতরাং বলা যায় যে, পানি একটি যৌগিক পদার্থ।

যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • যৌগিক পদার্থ ও কঠিন তরল ও বায়বীয় অবস্থায় থাকতে পারে
  • যৌগিক পদার্থকে ভাঙলে বা ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে ভিন্ন মৌলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়
  • তবে অনেক অনেক যৌগে পদার্থের আকার ও আয়তন থাকে না
  • দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি হয়

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *