পদ কাকে বলে, পদ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণ হলো পদ। আজকে আমরা জানতে পারবো পদ কাকে বলে, পদ কত প্রকার ও কি কি এবং উদাহরণসহ

পদ কাকে বলে

সাধারণত বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি  অর্থবোধক শব্দ দ্বারা তৈরি হয় পদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে যত শব্দ ব্যবহার করে থাকি প্রত্যেকটি একেকটি পদ  নামে পরিচিত। যেমন–  বালিকারা বল  খেলছে ।বাংলা বাংলায় যাকে বলা হয় পদ, ইংরেজিতে তাকে বলা হয় Part of Speech

উপরের বাক্য থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি , বালিকা শব্দের সাথে (রা) এবং খেল ক্রিয়া বা ধাতুমূলের সাথে (ছে)  যুক্ত হয়েছে।  আমরা পদের প্রকারভদেখতে পাচ্ছি,  উপরের দুটি শব্দের সাথে রা ও ছে  অতিরিক্ত চিহ্ন গুলোর নাম হল বিভক্তি।  বল শব্দের সাথে ব্যবহৃত কোন  চিহ্ন না থাকলেও(০)  শূন্য বা প্রথম বিভক্তিযুক্ত আছে বলে ধরা হয়।  সুতরাং আমরা বুঝতে পারি বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতুর নামই হচ্ছে পদ।  পদ কাকে বলে আমরা এখন বিস্তারিত ধাপে ধাপে জানার চেষ্টা করব

পদের প্রকারভেদ

পদ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা-

  • নাম পদ
  • ক্রিয়া পদ
  • নামপদ

নাম পদ

বিভক্তিযুক্ত প্রতিটি শব্দকে নাম পদ বলে। নাম পদ কে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।যথা-

  • বিশেষ্য
  • বিশেষণ
  • সর্বনাম
  • অব্যয়

ক্রিয়া পদ

ক্রিয়া পদ বাক্যে বিভক্তিযুক্ত  ক্রিয়ামূল বা ধাতুকে ক্রিয়াপদ বলে।

সুতরাং, পদ মোট পাঁচ প্রকার  যথা-

  • বিশেষ্য
  • বিশেষণ
  • সর্বনাম
  • অব্যয়
  • ক্রিয়া

বিশেষ্য পদ কাকে বলে

সাধারণভাবে কোন কিছুর নাম কে  বিশেষ্য বলে। বাংলা ব্যাকরণের মতে যেকোনো পদ দ্বারা কোন ব্যক্তি, বস্ত, জাত, স্থান; সমষ্টি; কোন কাজ বা গুণের নাম বোঝায়  তাকে বিশেষ্য পদ বলে।

যেমনঃ কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর,  বরিশাল ঢাকা,  পানি,  মানুষ, চেয়ার টেবিল ইত্যাদি

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ

বিশেষ্য পদকে আবার ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ

  • সংজ্ঞাবাচক  বিশেষ্য
  • জাতিবাচক বিশেষ্য
  • বস্তুবাচক বিশেষ্য
  •  গুণবাচক বিশেষ্য
  • সমষ্টিবাচক বিশেষ্য
  • ক্রিয়াবাচক  বিশেষ্য
  • সংজ্ঞাবাচক  বিশেষ্য

সংজ্ঞাবাচক  বিশেষ্য

কোন পদ  দ্বারা সুনির্দিষ্ট কোন  ব্যক্তি, বস্তু , বা স্থানের নাম বুঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমনঃ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, দিল্লি, বাংলাদেশ, ইত্যাদি

জাতিবাচক বিশেষ্য

যে পদ  দ্বারা  ভিন্ন ভিন্ন জাতি না বুঝিয়ে  সবকিছুকে একত্রে  বুঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমনঃ গরু, পাখি,মানুষ ,গাছ,নদী,পার্বত্য ইত্যাদি

বস্তুবাচক বিশেষ্য

যেকোনো বিশেষ্য পদের দ্বারা কোন বস্তুর নাম বোঝায় এবং যা সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করা যায় না বা বোঝা যায় না শুধু পরিমান  করা যায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমনঃ চাল ,ডাল, আটা, পানি, তেল ,বালি ইত্যাদি

গুণবাচক বিশেষ্য

কোন বিশেষ্য পদ দ্বারা কোন কিছুর গুণ অবস্থা ও ভাবের নাম বুঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে।যেমনঃ সুখ ,দুঃখ,কষ্ট,বেদনা  ইত্যাদি

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য

বাক্যে ব্যবহৃত যেকোনো বিশেষ্য পদ দ্বারা এক জাতীয়  ব্যক্তি বস্তু সমষ্টিকে বোঝায় তাকে সমষ্টিকবাচক বিশেষ্য  বলে। যেমনঃ জাতি,ধর্ম,দল, ছাত্রলীগ  সভা, সমিতি ,দল,পাল ইত্যাদি

ক্রিয়াবাচক  বিশেষ্য

যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোন ক্রিয়ার  কাজের ভাব প্রকাশ পায় তাকে  ক্রিয়া বাচক বিশেষ্য বলে। যেমনঃ  আগমন( কোন কিছু আশার বার্তা কাজ) ,যাত্রা( কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ),দর্শন( কোন কিছু দেখা কাজ)

বিশেষণ পদ কাকে বলে

যে পদ দ্বারা বিশেষ্য সর্বনাম ও ক্রিয়া পদের দোষ গুণ সংখ্যা পরিমাপ অবস্থাকে প্রকাশ পায় তাকে বিশেষণ পদ  বলে।

বিশেষণ পদের প্রকারভেদ

বিশেষণ পদ দুই প্রকার যথাঃ

  • নাম বিশেষণ
  • ভাব বিশেষণ

সর্বনাম পদ কাকে বলে

বাংলা ব্যাকরণের মতে, বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম বলে।

যেমনঃ

বিশেষ্য পদ– ইমন ভালো ছেলে

সর্বনাম পদ– সে প্রতিদিন স্কুলে যায । তার বুদ্ধি ভালো। তাকে সবাই ভালবাসে

আমরা উপরের বাক্যে দেখতে পাচ্ছি ইমনের পরিবর্তে সে,  তার, তাকে  এইগুলো বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয়েছে তাই সর্বনাম পদ ।

সর্বনাম পদের প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় সর্বনাম পদ  নানারকম হয়ে থাকে যেমনঃ

ব্যক্তিবাচক সর্বনামঃ  আমি, আমরা,  তুমি,তোমরা, সে, তারা, তিনি,, ইত্যাদি
নির্দেশক সর্বনামঃ এ, এটি, সেটি, সেগুলো ইত্যাদি
সাপেক্ষ সর্বনামঃ যে-সে, যা-তা, যিনি-তিনি  ইত্যাদি
প্রশ্নসূচক সর্বনামঃ,  কি,  কারা, কাদের, কে, কেন ইত্যাদি
আত্মবাচক সর্বনামঃ স্বয়ং,  নিজ , খোদ, আপনি  ইত্যাদি
অন্যদিকবাচক সর্বনামঃ অন্য, অপর,  পর ইত্যাদি

অব্যয় পদ কাকে বলে

অব্যয় পদ হল একটি বাক্যাংশ।যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকেও  বাক্যের শোভা বর্ধন করে  এবং বাক্যের সংযোগ ও বিয়োগের সমন্বয়ে ঘটায় তাকে অব্যয় পদ বলে।

যেমনঃ ছেলেটি গরিব কিন্তু সৎ। ওমা আমার কি ভাগ্য

অব্যয় পদের প্রকারভেদ

অব্যয় পদ মোট চার  প্রকার যথাঃ

  • পদোন্বয়ী অব্যয়
  • সমুচ্চয়ী  অব্যয়
  • অনন্বয়ীবা ভাববাচক অব্যয়
  • অনুকার অব্যয়

ক্রিয়া পদ কাকে বলে

যে পদ দ্বারা কোন কাজ বা কর্মকে বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে  বা কোন পদে কার্য সম্পাদনকে বুঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমনঃ আমি ভাত খাই, আমি কাজ করব, আমি খেলতে যাব ইত্যাদি।

ক্রিয়া পদের প্রকারভেদ

সাধারণভাবে  ক্রিয়া পদকেদুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ

  • সমাপিকা ক্রিয়া
  • অসমাপিকা ক্রিয়া

সমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়া দ্বারা কোন  বক্তার মনের ভাব প্রকাশ পায় সম্পূর্ণরূপে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমনঃ আমি মনোযোগ সহকারে বই পড়ি।

অসমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়া দ্বারা কোন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত পায়না তাকে অসমাপিকা কি দিয়ে বলে।  যেমনঃ আমি স্কুলে গিয়ে তোমার সাথে বই পড়বো

Similar Posts

2 Comments

    1. ধন্যবাদ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে banglaquestion.com এর সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *