বল কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানতে চলেছি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের বল সম্পর্কে তো চলো জেনে নেওয়া যাক বল কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? এই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

বল কাকে বলে

বল কাকে বলে – বল হল এমন একটি পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা যা কোন বস্তুর গতি পরিবর্তন করতে পারে। বলের প্রয়োগে বস্তুর বেগ দিক গতি উভয় পরিবর্তন হতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে,যখন আমরা কোন বস্তুকে ধাক্কা দিই, টানি, বা ঠেলি, তখন আমরা সেই বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করি।বলের পরিমাপের একক হলো নিউটন (N)।

বল কাকে বলে

বলের বৈশিষ্ট্য

বলে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে নিচে কিছু উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলোঃ

  •  দিক: বলের একটি নির্দিষ্ট দিক থাকে। টানা বা ঠেলার দিকই বলের দিক।
  • মান: বলের একটি নির্দিষ্ট মান থাকে। বলের মান যত বেশি, বস্তুর গতি পরিবর্তনের হারও তত বেশি।
  • প্রয়োগের বিন্দু: বল কোন বিন্দুতে প্রয়োগ করা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ।
  • জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া: যখন একটি বস্তু অন্য বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন দ্বিতীয় বস্তুও প্রথম বস্তুর উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে।
  • ত্বরণ সৃষ্টি করে: বল বস্তুর ত্বরণ সৃষ্টি করে। বলের মান যত বেশি, ত্বরণও তত বেশি। 6. বিকৃতি সৃষ্টি করে: বল বস্তুর বিকৃতি সৃষ্টি করতে পারে।
  • বলের মাত্রা, F = [MLT-2]m ভরের কোনো একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করার ফলে এর ত্বরণ a সৃষ্টি হলে, F = ma     অর্থাৎ ত্বরণ এবং ভরের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।

বলের প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বল বিদ্যমান রয়েছে। একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ

  • মৌলিক বল
  • যৌগিক বল

মৌলিক বল

মৌলিক বল হলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান এমন বল যা অন্য কোনো বল থেকে উৎপন্ন হয় না। বরং, অন্যান্য বলগুলো মৌলিক বল থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন:মহাকর্ষ বল (Gravitational force)তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)সবল নিউক্লিয় বল (Strong nuclear force)দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak nuclear force)

যৌগিক বল

যে সকল বল সমূহ দুই বা ততোধিক মৌলিক বল থেকে তৈরি/উৎপন্ন হয় তাকে যৌগিক বল বলে। যেমনঃ ঘর্ষণ বল,টান বল,স্থিতিস্থাপক বল ইত্যাদি।

প্রকৃতিতে মৌলিক বল প্রধানত 4 প্রকার। যথাঃ

  • মহাকর্ষ বল (Gravitational force)
  • তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)
  •  সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force)
  • দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear force)

মহাকর্ষ বল (Gravitational force)

মহাকর্ষ বল হলো মহাবিশ্বের সকল ভরসম্পন্ন বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বল। এই বলের প্রভাবে বস্তুসমূহ একে অপরের দিকে আকৃষ্ট হয়। যেমন: পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, বৃষ্টি নিচে পড়ে, চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ইত্যাদি । মহাকর্ষ বল অত্যন্ত দুর্বল বল। মহাকর্ষ বল নক্ষত্রগুলোকে একত্রিত করে গ্যালাক্সি গঠন করে।

 গুরুত্ব:

  • মহাকর্ষ বল মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তনের জন্য অপরিহার্য।
  • মহাকর্ষ বলের কারণেই গ্রহ, নক্ষত্র ও ছায়াপথ গঠিত হয়।
  • মহাকর্ষ বলের কারণেই জোয়ার-ভাটা হয়।
  • মহাকর্ষ বলের কারণেই আমরা পৃথিবীতে আটকে আছি।

তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)

তড়িৎ-চৌম্বক বল বলতে দুটি আহিত বা চার্জিত কণার মধ্যে যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল ক্রিয়া করে তাকে বোঝায়। চৌম্বক বল এবং তড়িৎ বল সাধারণত আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ উভয় ধরনের হতে পারে।ধারণা করা হয় যে, মূলত চার্জহীন এবং ভরহীন ফোটন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই তড়িৎ-চৌম্বক বল কার্যকর হয়।প্রকৃতির অধিকাংশ বলই তড়িৎ-চৌম্বক বলের অন্তর্ভুক্ত। ঘর্ষণ বল, কুলম্বের তড়িৎ বল, কুলম্বের চৌম্বক বল, স্প্রিং বল, পরমাণুতে কার্যকর নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যকার পারমাণবিক বল ইত্যাদি তড়িৎ-চৌম্বক বলের বিভিন্ন রূপ।

 সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force)

প্রতিটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। এদেরকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলা হয়। নিউক্লিয়াসের মধ্যে সমধর্মী ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটনগুলো একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকে। এর ফলে কুলম্বের বিকর্ষণ বল তাদের মধ্যে তীব্রভাবে কাজ করে। এই বিকর্ষণ বল এতটাই শক্তিশালী যে, তা নিউক্লিয়াসকে ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা রাখে।নিউক্লিয়নের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ বলও কাজ করে। কিন্তু এই বল কুলম্বের বিকর্ষণ বলের তুলনায় অনেক দুর্বল। তাই মাধ্যাকর্ষণ বল নিউক্লিয়াসকে ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে না।নিউক্লিয়াস স্থায়ী থাকার জন্য অবশ্যই এর ভেতরে আরেক ধরনের বল কাজ করতে হবে। এই বলটি হলো সবল নিউক্লিয় বল।

সবল নিউক্লিয় বলের বৈশিষ্ট্য:

আকর্ষণধর্মী: এই বল আকর্ষণধর্মী, যার ফলে প্রোটন ও নিউট্রন একে অপরের দিকে আকৃষ্ট হয়।
স্বল্প পাল্লা বিশিষ্ট: এই বলের কার্যক্ষেত্র খুবই সীমিত। 10^-15 মিটারের বেশি দূরত্বে এই বল কাজ করে না।
চার্জ নিরপেক্ষ: এই বল চার্জের উপর নির্ভর করে না।
নিউক্লিয়াসের বাইরে ক্রিয়াশীল নয়: এই বল শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসের ভেতরেই কাজ করে।
দ্রুত হ্রাস: দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বল দ্রুত হ্রাস পায়।

সবল নিউক্লিয় বলের গুরুত্ব:

পরমাণুর স্থিতিশীলতা: সবল নিউক্লিয় বল ছাড়া পরমাণু গঠিত হতে পারত না।
সূর্যের শক্তি: সূর্যের কেন্দ্রে পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়া এই বলের মাধ্যমে সম্ভব হয়।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি: মহাবিশ্বের সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে এই বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear force)

দুর্বল নিউক্লিয় বল, যা দুর্বল পারমাণবিক শক্তি নামেও পরিচিত, মৌলিক বলের চতুষ্টয়ের অন্যতম। এটি তেজস্ক্রিয়তা, নিউট্রিনো তৈরি এবং সূর্যের জ্বলনের মতো প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্বল নিউক্লিয় বল ইলেকট্রন, নিউট্রিনো এবং W ও Z বোসন নামক কণার মাধ্যমে কাজ করে। এই বল ইলেকট্রনের মতো হালকা কণার মধ্যে কাজ করে এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মতো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

বৈশিষ্ট্য:

  • অত্যন্ত দুর্বল: সবল নিউক্লিয় বলের তুলনায় দুর্বল নিউক্লিয় বল 10^10^38 গুণ দুর্বল।
  • স্বল্প পরিসীমা: এই বলের প্রভাব 10^-18 মিটারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।
  • চার্জ নির্ভর: এই বল ইলেকট্রিক চার্জের উপর নির্ভর করে।
  • তাড়িত-চৌম্বক বলের সাথে সম্পর্ক: দুর্বল নিউক্লিয় বল এবং তাড়িত-চৌম্বক বল একই মূল বলের দুটি ভিন্ন রূপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

গুরুত্ব:

  • তেজস্ক্রিয়তা: দুর্বল নিউক্লিয় বল বিটা ক্ষয়ের মতো তেজস্ক্রিয় ক্ষয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
  • নিউট্রিনো তৈরি: এই বল নিউট্রিনো তৈরির জন্য দায়ী।
  • সূর্যের জ্বলন: সূর্যের কেন্দ্রে পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়া দুর্বল নিউক্লিয় বলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *