ভাষা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
মানুষের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম বা বাহন হলো ভাষা। যদিও ভাষা নিয়ে সাধারন কারো তেমন প্রশ্ন জাগেনা। তবে আমরা যেই মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করি বা বলি সেটার মৌখিক রূপকে ভাষা বলা যায়, চলুন বিস্তারিত যেনে নেই ভাষা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি।
ভাষা কাকে বলে?
ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা যেসকল অর্থবোধক শব্দ বলি বা লিখি, তাকে ভাষা বলে। ভাষা যোগাযোগের একটি সহজাত মাধ্যম।
ভাষার বৈশিষ্ট্য
- অর্থপূর্ন ধ্বনি বা শব্দই ভাষা।
- ভাষা পরস্পরের মনের ভাব আদান-প্রদানের মাধ্যম।
- মানুষের স্বভাব, সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রকাশ করে ভাষা।
- একটি জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে একটি ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- বাংলাদেশের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।
- ভাষা বক্তব্যের অন্তর্গত ভাবকে প্রকাশ করে থাকে।
- ভিন্ন দেশ, কাল, অঞ্চল ও পরিবেশ ভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন হয়।
- আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট।
ভাষার প্রকারভেদ
- মৌখিক বা কথ্য ভাষা
- লিখিত বা লেখ্য ভাষা
মৌখিক ভাষা
মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা বাকযন্ত্রের সাহায্যে যে অর্থবোধক ধ্বনি বলি, তাই মৌখিক ভাষা। মৌখিক ভাষা দুই প্রকার-
আঞ্চলিক ভাষা
কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের মৌখিক ভাষাই আঞ্চলিক ভাষা। যেমন- নোয়াখালী জেলার মৌখিক ভাষা।
বৈশিষ্ট্য –
- আঞ্চলিক ভাষা লোক-সংস্কৃতির সম্পদ।
- আঞ্চলিক ভাষা সম্পূর্নরুপে ব্যাকরন মেনে চলে না।
- এটি স্থান, কালভেদে পরিবর্তনশীল ভাষা।
- এ ভাষা প্রাকৃতিক রূপে ব্যবহৃত হয়।
সর্বজনীন ভাষা
সকল অঞ্চলের মানুষের কোন একটি মোখিক ভাষার প্রয়োগ থাকলে, তা-ই সর্বজনীন ভাষা। যেমন- ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা।
বৈশিষ্ট্য –
- এটি কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের সীমাবদ্ধ ভাষা নয়।
- ব্যাকরনের কিছু সাধারন নিয়ম মেনে চলে এই ভাষা।
- এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে।
লিখিত ভাষা
যে ভাষায় বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে মনের ভাব লিখে প্রকাশ করা হয়, তাই লিখিত ভাষা। লিখিত ভাষা দুই প্রকার-
সাধু ভাষা
যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্নরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাধু ভাষা বলে । বাংলা লিখিত ভাষার প্রাচীন রূপ ছিলো সাধু ভাষা। বর্তমানেও সাধুভাষার অস্তিত্ব শুধু লিখিত ভাষায়। যেমন- তাহারা মাঠে খেলিতেছে।
বৈশিষ্ট্য –
- সাধু ভাষা মৌখিক ভাষার প্রাচীন রূপ।
- এ ভাষা কৃত্রিম রূপে গঠিত।
- এই ভাষার ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ বিন্যাস ব্যাকরন দ্বারা সুনির্দিষ্ট।
- এটি ব্যাকরনের সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চলে তাই অপরিবর্তনীয়।
- এর উচ্চারন কিছুটা কঠিন ও গুরুগম্ভীর।
- সাধুভাষার শব্দরূপ দীর্ঘ।
- কবিতা, নাটক ও বক্তৃতায় সাধু ভাষা ব্যবহারযোগ্য।
চলিত ভাষা
যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হয় তাকে চলিত ভাষা বলে। বর্তমানে সর্বত্র প্রচলিত লিখিত ভাষাই চলিত ভাষা। যেমন- তারা মাঠে খেলছে, সে স্কুলে যাচ্ছে।
বৈশিষ্ট্য-
- কবিতা, নাটক ও বক্তৃতায় চলিত ভাষা ব্যবহৃত হয়।
- চলিত ভাষা সম্পূর্নরুপে ব্যাকরন মেনে চলেনা, তাই পরিবর্তনশীল।
- বলিত ভাষা গম্ভীর্যহীন, হালকা এবং উচ্চারনে সহজ ও সরল।
- শব্দসমূহের রূপ দীর্ঘ নয়।
- চলিত ভাষা কথ্যরূপে ব্যবহূত এবং অকৃত্রিম।
ভাষার গুরুত্ব
যোগাযোগঃ ভাষা ছাড়া মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব নয়।
সভ্যতার বিকাশঃ ভাষার মাধ্যমে সভ্যতা বিকশিত হয় এবং জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়।
চিন্তাভাবনা প্রকাশঃ ভাষার মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং মতামত প্রকাশ করতে পারি।
সামাজিক বন্ধনঃ ভাষা মানুষকে একত্রিত করে এবং সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে।
ভাষার ধরন
মাতৃভাষাঃ যে ভাষা আমরা শৈশবে শিখি তাকে মাতৃভাষা বলে।
বিদেশী ভাষাঃ যে ভাষা আমরা শিখি কিন্তু আমাদের মাতৃভাষা নয় তাকে বিদেশী ভাষা বলে।
আঞ্চলিক ভাষাঃ কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে।
প্রমিত ভাষাঃ কোনো ভাষার সর্বস্বীকৃত এবং আদর্শ রূপকে প্রমিত ভাষা বলে।
এছাড়াও বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণের যে কোন বিষয়বস্তু জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন এবং নতুন তথ্য জানতে আমাদেরকে প্রশ্ন করতে পারেন ধন্যবাদ।
Good
ধন্যবাদ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে banglaquestion.com এর সাথে থাকুন