মাটি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে যার নাম হল “মাটি” সুতরাং চলুন আমরা মাটি সম্পর্কে জেনে নিই মাটি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, নিচে মাটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

মাটি কাকে বলে

মাটি বা মৃত্তিকা বলতে আমরা পৃথিবীর উপরিভাগের ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা, জৈব পদার্থ, পানি এবং বায়ু দ্বারা গঠিত নরম স্তরকে বোঝায়।পৃথিবীর জল, বায়ু,খনিজ এবং জৈব পদার্থের সাথে মিশে গিয়ে ভাগের সমান্তরালে ভূ-ভাগের সমান্তরালে যে পাতলাআবরণের সৃষ্টি হয়েছে, তাকে মাটি বলে।

এটি জীবের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জায়গা তৈরি করে তোলে

মাটির গুনাগুন

মাটিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির গুনাগুন থাকে। মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের নরম খনিজ এবং জৈব উপাদানের মিশ্রণ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মাটিতে প্রধানত চার(৪)ধরনের উপাদান নিয়ে গঠিত যথাঃ

  • খনিজ পদার্থ-৪৫%
  • জৈব পদার্থ-৫%
  • বায়ু-২৫%
  • পানি-২৫%

খনিজ পদার্থঃ

ভূ-ত্বক প্রথমে শিলা দ্বারা গঠিত ছিল। সময়ের সাথে সাথে, শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়া (যেমন বৃষ্টি, বাতাস, তাপমাত্রার পরিবর্তন) এর প্রভাবে শিলা ভেঙ্গে ছোট ছোট খণ্ডে পরিণত হয়। এই খণ্ডগুলো বালি, পলি এবং কর্দম নামে পরিচিত।মাটি এই বালি, পলি, কর্দম, জৈব পদার্থ এবং অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান (যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম) এর মিশ্রণ দ্বারা গঠিত হয়।শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়া মাটিতে এই খাদ্যোপাদানগুলো মুক্ত করে।মাটিতে খনিজের পরিমাণ ৪৫%।

জৈব পদার্থঃ

মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ সাধারণত ১-২% থাকে। তবে, হিম অঞ্চলের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ২-৫% পর্যন্ত হতে পারে। এই জৈব পদার্থ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ এবং মলমূত্র থেকে তৈরি হয়।মাটির আবদ্ধকরণ পদার্থ হিসেবে জৈব পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং মাটির কাঠামো উন্নত করে।মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম হলেও এটি মাটির গুণাবলী নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

বায়ু ও পানিঃ

বর্ষাকালে: প্রবল বৃষ্টিপাত বা সেচের ফলে মাটির অধিকাংশ রন্ধ্র পানিতে ভরে যায়। শুষ্ক মৌসুমে: এই রন্ধ্রগুলো বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে।মাটির বায়ু: বায়ুমন্ডলের বায়ুর তুলনায় মাটির বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডজলীয়বাষ্প বেশি থাকে, অক্সিজেন কম থাকে।

বায়ুর কাজ:

  • শ্বসন প্রক্রিয়া: মাটিতে বসবাসকারী প্রাণী ও জীবাণুদের শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ব্যবহার হয়।

বায়ু ও পানির কাজ:

  • মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক কার্য নিয়ন্ত্রণ:
    • মাটির কাঠামো গঠনে,
    • জৈব পদার্থের পচন প্রক্রিয়ায়,
    • পুষ্টি উপাদান দ্রবীভূতকরণে
    • জীবাণুর কার্যকলাপে
    • জল ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে
    • মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে
    • মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে
    • মাটির pH নিয়ন্ত্রণে বায়ু ও পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য: বায়ু ও পানি শিলার ক্ষয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, নতুন মাটি তৈরিতে অবদান রাখে।
  • সালোকসংশ্লেষণ: উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরিতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ু ও পানি অপরিহার্য।
  • দ্রাবক ও পুষ্টি উপাদানের বাহক: পানি মাটিতে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান গাছের শিকড়ে পৌঁছে দেয়।

পরিশেষে বলা যায়, মাটিতে বায়ু ও পানির উপস্থিতি জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য।

মাটির প্রকারভেদ

মাটি সাধারণত তিন(৩) প্রকার যথাঃ

  • এটেল মাটি
  • দোআঁশ মাটি
  • বেলে মাটি

এটেল মাটি বৈশিষ্ট্য

এটেল মাটি কাকে বলে
এটেল মাটি

 

  • এটেল মাটিতে বালু অপেক্ষা পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে।
  • এ কাদা মাটি খুব নরম, দানা খুব ছোট ও মিহি।
  • এ মাটি বেশি পানি ধরে রাখতে পারে।
  • এ মাটিতে ভালভাবে বাতাস চলাচল করতে পারেনা।
  • এ মাটি সব ফসলের জন্য তেমন উপকারী নয়, তবে ধান চাষ করা যায়।

দোআঁশ মাটি বৈশিষ্ট্য

দোআঁশ মাটি কাকে বলে
দোআঁশ মাটি
  • দোআঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা সম পরিমানে থাকে।
  • এ মাটির পানি ধারন ক্ষমতা মাঝারী।
  • চাষাবাদের জন্য দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এ মাটিতে ধান, পাট, গম, পিয়াজ, মরিচ, ভূট্টা, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি ভাল জন্মে।

বেলে মাটি বৈশিষ্ট্য

বেলে মাটি
  • বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে।
  • এ মাটির পানি ধারন ক্ষমতা কম।
  • বেলে মাটিতে ফসল তেমন ভাল হয় না তবে তরমুজ শসা, বাঙ্গী, চীনাবাদাম, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভাল জন্মে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *