শব্দ কাকে বলে ও কত প্রকার কি কি

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে, আজকে আমরা জানতে চলেছি নতুন একটি তথ্য যার নাম “শব্দ” যখন আমরা আমাদের মুখ থেকে কোন কথা বের করি তারই একটি লিখিত রূপ এই হয় শব্দ। অর্থ হলো শব্দের প্রাণ। তো চলুন আজকে “শব্দ” সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাক নিচে শব্দ কাকে বলে ও কত প্রকার কি কি এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

শব্দ কাকে বলে

শব্দ বলতে বোঝায় কিছু অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিকে যা একটি বাক্য গঠনের মূল উপাদান। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভাষার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল শব্দ। এক বা একাধিক ধ্বনি নিয়ে একত্রিত হয়ে যে অর্থ প্রকাশ পায় তাকে শব্দ বলে।

শব্দের প্রকারভেদ

শব্দের প্রকারভেদ নিয়ে ভাষাতাত্বিকদের কিছু মতবিরোধীতা আছে। তবে শব্দের প্রকারভেদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

  • গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
  • অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
  • উৎপত্তি অনুযায়ী শব্দের শ্রেণীবিভাগ।

গঠন অনুসারে শব্দকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ

  • মৌলিক শব্দ
  • সাধিত শব্দ বা যৌগিক শব্দ

মৌলিক শব্দ কাকে বলে

মৌলিক শব্দ হলো এমন শব্দ যাদেরকে আরো ও ছোট অর্থবহ অংশে ভাগ করা যায় না। অন্য কথায় বলতে গেলে,এই শব্দগুলোর নিজস্ব অর্থ থাকে এবং তাদের সাথে কোনো উপসর্গ, প্রত্যয়, বা বিভক্তি যুক্ত থাকে না। যেমনঃ মা, হাত,ঘোড়া

সাধিত শব্দ বা যৌগিক শব্দ

যৌগিক শব্দ হলো দুটি বা ততোধিক মৌলিক শব্দের মিশ্রণে গঠিত নতুন শব্দ। এই শব্দগুলোর নিজস্ব অর্থ থাকে এবং তাদের মিশ্রণে একটি নতুন অর্থ সৃষ্টি হয়। যেমনঃ ঘরবাড়ি =ঘর+বাড়ি, সুন্দর + মুখ = সুন্দরমুখী।

অর্থ অনুসারে শব্দকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ

  • যৌগিক শব্দ
  • রূঢ়ি শব্দ এবং
  • যোগরূঢ় শব্দ।

যৌগিক শব্দ

যে সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ এবং প্রচলিত অর্থ একই সেই সমস্ত শব্দকে যৌগিক শব্দ বলে।

যেমনঃ  জলজ, বনজ, পাঠক।

রূঢ়ি শব্দ

রূঢ়ি শব্দ হলো এমন শব্দ যাদের অর্থ প্রত্যয় বা উপসর্গের অর্থের উপর নির্ভর করে না, বরং রীতিনীতি ও প্রচলনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, শব্দের উপাদান বিশ্লেষণ করেও আমরা রূঢ়ি শব্দের সঠিক অর্থ বের করতে পারি না। যেমনঃ

  • পঙ্কজ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘পঙ্কে জন্মে যা’, কিন্তু প্রচলিত অর্থ ‘পদ্ম’। ‘পদ্ম’ও পঙ্কে জন্মে, সুতরাং এই জাতীয় শব্দে দুটি অর্থই বর্তমান।
  • হস্তী: হস্ত + ইন = হাত আছে যার। কিন্তু হস্তী বলতে আমরা হাতি বুঝাই।

যোগরূঢ় শব্দ

যোগরূঢ় শব্দ হলো এমন শব্দ যাদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ (অর্থাৎ শব্দের উপাদান বিশ্লেষণ করে যে অর্থ পাওয়া যায়) এবং ব্যবহারিক অর্থ (অর্থাৎ প্রচলিত অর্থ) একে অপরের থেকে ভিন্ন। যেমনঃ

  • দাতা: দান করে যে। কিন্তু “দাতা” বলতে আমরা শুধু দানকারীকে বুঝাই না, বরং “দাতা” শব্দের অর্থ “দাঁত”ও হতে পারে।
  • জলদ: জল দেয় যে। কিন্তু “জলদ” বলতে আমরা শুধু জল দেওয়াকে বুঝাই না, বরং “জলদ” শব্দের অর্থ “দ্রুত”ও হতে পারে।

উৎপত্তি অনুসারে শব্দকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়

  • তৎসম শব্দ
  • অর্ধতৎসম শব্দ
  • তদ্ভব শব্দ
  • দেশি শব্দ ও
  • বিদেশি শব্দ

তৎসম শব্দ

তৎসম শব্দ হলো সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় যে শব্দগুলো অপরিবর্তিত রূপে এসেছে, সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।এই শব্দগুলোর উচ্চারণ ও রূপ সংস্কৃত ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমনঃ

  • চন্দ্র: চাঁদ
  • সূর্য: সূর্য
  • নক্ষত্র: নক্ষত্র
  • ভবন: ভবন
  • ধর্ম: ধর্ম
  • পাত্র: পাত্র
  • মনুষ্য: মানুষ
  • জল: জল
  • মস্তক: মাথা
  • অন্ন: খাবার
  • গৃহ: ঘর
  • চরণ: পা
  • তৃণ: ঘাস
  • অগ্রহায়ণ: অগ্রহায়ণ মাস
  • ভাষা: ভাষা

অর্ধতৎসম শব্দ

অর্ধতৎসম শব্দ হলো এমন শব্দ যা সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন হলেও বাংলা ভাষায় আসার সময় কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। উচ্চারণ, রূপ বা অর্থের দিক থেকে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমনঃ

  • মাথা: মস্তক (সংস্কৃত)
  • রাত: রাত্রি (সংস্কৃত)
  • নদী: নদী (সংস্কৃত)
  • আগুন: অগ্নি (সংস্কৃত)
  • পিতা: পিতৃ (সংস্কৃত)
  • মা: মাতৃ (সংস্কৃত)

তদ্ভব শব্দ

তদ্ভব শব্দ হলো এমন শব্দ যা সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন হলেও বাংলা ভাষায় আসার সময় বেশি পরিবর্তিত হয়েছে। উচ্চারণ, রূপ, বানান এবং অর্থের দিক থেকে এই পরিবর্তন স্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করা যায়। তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমনঃ

  • মা: মাতৃ (সংস্কৃত)
  • বাবা: পিতৃ (সংস্কৃত)
  • ভাই: ভ্রাতৃ (সংস্কৃত)
  • বোন: ভগিনী (সংস্কৃত)
  • চোখ: চক্ষু (সংস্কৃত)
  • কাঁধ: কাঁধ (সংস্কৃত)
  • হাত: হস্ত (সংস্কৃত)

দেশি শব্দ

দেশি শব্দ হলো এমন শব্দ যা বাংলা ভাষার নিজস্ব শব্দ। এই শব্দগুলোর উৎপত্তি বাংলা ভাষার ভূখণ্ডে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভাষা থেকে হয়েছে। দেশি শব্দ বাংলা ভাষার মৌলিক উপাদান এবং এই ভাষাকে অন্যান্য ভাষা থেকে আলাদা করে তোলে। যেমনঃ

  • মানুষের সাথে সম্পর্কিত: মা, বাবা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে,
  • প্রাকৃতিক দৃশ্য: নদী, পাহাড়, বন, জঙ্গল,
  • প্রাণী: হাতি, বাঘ, শেয়াল,
  • গাছপালা: আম, জাম্বুরা, কাঁঠাল,
  • ক্রিয়া: খাওয়া, ঘুমানো, বলা,
  • বিশেষণ: ভালো, মন্দ, বড়, ছোট

এই দেশি শব্দ কি আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ

  • অন-আর্য দেশি শব্দ
  • আর্য দেশি শব্দ

অন-আর্য দেশি শব্দঃ অন-আর্য দেশি শব্দ হলো সেই দেশি শব্দগুলো যাদের উৎপত্তি আর্য ভাষা থেকে নয়। এই শব্দগুলো বাংলা ভাষার আদি অধিবাসীদের ভাষা থেকে এসেছে, যারা আর্যদের আগমনের পূর্বে এই অঞ্চলে বাস করত। যেমনঃ  ডাব, ঝাঁটা, ঝোল, ডোম, ঝিঙ্গা, কুলা, কান্দি, মুড়ি, উচ্ছে, খুকি, ইত্যাদি।

আর্য দেশি শব্দঃ যে সকল শব্দ ভারতীয় আর্য ভাষার অন্যান্য শাখা থেকে বাংলায় এসেছে তাকে আর্য দেশি শব্দ বলা হয়। যেমন- হিন্দি সেলাম, মস্তান, ওস্তাদ, ইত্যাদি। গুজরাটি হরতাল ইত্যাদি

বিদেশি শব্দ

বিদেশি শব্দ বলতে বোঝায় সেই শব্দগুলো যা বাংলা ভাষার নিজস্ব নয়, বরং অন্য ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে। এই শব্দগুলো বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং বিভিন্ন ধারণা প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

কিছু বিদেশি শব্দের উদাহরণঃ

  • আরবিঃ আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, জান্নাত, জাহান্নাম, হজ্জ, তওবা,
  • ফারসিঃ দরবার, বাদশাহ, জাহাজ, গোলাপ,
  • ইংরেজিঃ কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল
  • পর্তুগিজঃ জিলাপি, আলু,
  • ফরাসিঃ রেস্তোরাঁ,
  • ওলন্দাজঃ ক্যানভাস
  • তুর্কি শব্দঃ আলখাল্লা, কাঁচি, কাবু, কুলি, বাবুর্চি, মুচলেকা, প্রভৃতি।
  • চীনা শব্দঃ চা, চিনি, লিচু, প্রভৃতি।
  • পাঞ্জাবি শব্দঃ চাহিদা, শিখ
  • গুজরাটি শব্দঃ খদ্দর, হরতাল
  • জাপানি শব্দঃ রিক্সা, হারিকিরি

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *