সমাজ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে, আশা করছি সকলেই ভাল আছেন, আজকে আমরা সামাজিক একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করব তাহলে সমাজ নিয়ে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সমাজ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? নিচে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

সমাজ কাকে বলে

সমাজ বলতে বোঝায় মানুষের একসাথে বসবাস ও পারস্পরিক সম্পর্কের একটি জটিল ব্যবস্থা। এটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রীতিনীতি, আইন-কানুন, মূল্যবোধ এবং প্রতিষ্ঠান দ্বারা গঠিত। সমাজ হচ্ছে সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা।

সমাজ কাকে বলে

আদিমকাল থেকেই মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে সমাজ গঠন করে বসবাস শুরু করে। নিরাপত্তা ও জীবন ধারণের সহজতার জন্য তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করতে শুরু করে। মানব সমাজের আদিম রূপে, মানুষ শিকার ও বন্য ফলমূল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। কালের পরিক্রমায়, কৃষিকাজের উদ্ভাবন, ধাতুর ব্যবহার, নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজ ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে থাকে। আজকের সমাজ, যা পোস্টমডার্ন বা উত্তর আধুনিক নামে পরিচিত, তা অত্যন্ত জটিল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।

সমাজের উপাদান বা সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি

  • মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজে মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত থাকে, যেমন পারিবারিক, বন্ধুত্বপূর্ণ, পেশাগত, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি।
  • সংস্কৃতি: সমাজের সদস্যদের মধ্যে সাধারণ মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতিনীতি ও আচার-আচরণ থাকে।
  • সামাজিক কাঠামো: সমাজে বিভিন্ন স্তর, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান থাকে যা সমাজের কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে।
  • সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: সমাজের আইন-কানুন, নিয়মকানুন ও নীতিমালা সমাজের সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পরিবর্তনশীলতা: সমাজ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন ধারণা, প্রযুক্তি ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে সমাজ টিকে থাকে।

সমাজের গুরুত্ব

  • মানুষের চাহিদা পূরণ: সমাজ মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
  • নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: সমাজ মানুষকে বিপদ ও অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করে।
  • সামাজিকীকরণ: সমাজ মানুষকে সামাজিক নিয়ম-কানুন, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি শিখতে সাহায্য করে।
  • ব্যক্তিগত বিকাশ: সমাজ মানুষের ব্যক্তিগত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক উন্নয়ন: সমাজ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করে।

সমাজের প্রকারভেদ

সমাজ বিজ্ঞানীগণ মানব সমাজকে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করেছেন তার নিচে দেওয়া হলঃ

 Hunting and gathering society বা শিকার ও সমাবেশকেন্দ্রিক সমাজ কাকে বলেঃ

এই আদি মানব সমাজ শিকার এবং বন্য ফলমূল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রযুক্তির বিকাশ অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং মানুষ শিকারের জন্য হাত এবং গাছের ডাল ব্যবহার করত। ব্যক্তিগত সম্পদের অভাব ছিল এবং সমাজের সকল সদস্য উৎপাদিত সম্পদের উপর সমান অধিকার ভোগ করত। এই কারণে সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স এই সমাজকে(Primitive communism ) “আদি সাম্যবাদী সমাজ” বলে অভিহিত করেছিলেন।

Horticultural society বা উদ্যান কেন্দ্রিক সমাজ কাকে বলে 

এই সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে শিকার এবং সংগ্রহ সমাজ থেকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং খাদ্য সংগ্রহের পরিবর্তে উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই ক্রমবিকাশে কৃষি ভিত্তিক সমাজের ধারণা Horticultural society থেকে শুরু হয়। এখানে মানুষ বীজ থেকে নয় বরং গাছের ডালপালা থেকে নতুন গাছ উৎপাদন করত। Horticultural society মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এই সমাজ মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে আরও কার্যকর হতে সাহায্য করে এবং স্থায়ী বসবাসের জন্য পথ প্রশস্ত করে।

Harding society বা পশু প্রতিপালন কেন্দ্রিক সমাজঃ

এই সমাজ ব্যবস্থায়, মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য পশু পালন করত। শিকারের মাধ্যমে পশু প্রাপ্তির কষ্ট এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়ে মানুষ জ্যান্ত পশু স্বীকার শুরু করে। এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে লক্ষ্য করতে সাহায্য করে যে পশুগুলো পোষ মানলে তারা নিয়মিত খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদান করতে পারবে। এই ভাবেই মানুষ পশু শিকার থেকে পশু পালনের দিকে ধাবিত হয়।

Agrarian society বা কৃষিভিত্তিক সমাজঃ

লাঙ্গল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়। এই আবিষ্কারের ফলে কৃষির বিকাশ লাভ করতে থাকে এবং এর ফলে প্রথম বারের মত মানুষ স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলে। এর পূর্বে মানুষ nomadic বা যাযাবর জীবন যাপন করত। কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরানোর অবসান ঘটে এবং মানুষ fixed settlement বা স্থায়ী আবাসনের দিকে ধাবিত হয়।

Industrial society বা শিল্পনির্ভর সমাজঃ

বৈজ্ঞানিক বিপ্লব মানব সভ্যতাকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক আরও অগ্রসর করে তোলে। এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবে ইংল্যান্ডে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে শিল্প বিপ্লবের সূচনা ঘটে।শিল্প বিপ্লবের ফলে গোটা ইউরোপ জুড়ে ধীরে ধীরে ফিউডালিজম বা সামন্তবাদের সমাপ্তি ঘটে এবং কৃষি ভিত্তিক সমাজ কাঠামোর পরিবর্তে শিল্পোন্নত সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই নতুন সমাজ ব্যবস্থায় **ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রতা, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি মতবাদ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর ফলে সমাজে ধর্মের প্রভাব খর্ব হয় এবং পূর্বের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সকল রীতিনীতি ভেঙে পড়ে।

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা

বাংলাদেশের সমাজ বহুমুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশের সমাজ পরিবার-কেন্দ্রিক।বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা বেশ জটিল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণের প্রভাবে গড়ে উঠেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

  • গ্রামীণ-প্রধান: বেশিরভাগ মানুষ (প্রায় ৭০%) গ্রামে বাস করে এবং কৃষি ও মৎস্যজীবনের উপর নির্ভরশীল।
    পারিবারিক কাঠামো: বর্ধিত পরিবার ব্যবস্থা এখনও প্রচলিত, যদিও একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ধর্ম: ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম (প্রায় ৯০%), হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীও রয়েছে।
  • শ্রেণীবিভাগ: সমাজে স্পষ্ট শ্রেণীবিভাগ বিদ্যমান, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য লক্ষণীয়।
  • লিঙ্গ: পুরুষ প্রধান সমাজ, নারীর ক্ষমতায়ন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • শিক্ষা: সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সকলের জন্য সহজলভ্য নয়।
  • অর্থনীতি: উন্নয়নশীল অর্থনীতি, কৃষি প্রধান, তবে শিল্প ও সেবা খাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • রাজনীতি: সংসদীয় গণতন্ত্র, বহুদলীয় ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা একটি চ্যালেঞ্জ।

পরিশেষে বলা যায়, সমাজ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সকলে একত্রে মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোন কাজকে সহজে গ্রহণ করা যায়। সমাজ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জানতে চাইলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন । “ধন্যবাদ”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *