তরঙ্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হল তরঙ্গ। আজকে আমরা জানতে পারবো তরঙ্গ কাকে বলে, প্রকারভেদ এবং বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের ব্যবহার সম্পর্কে।

তরঙ্গ কাকে বলে

তরঙ্গ হলো একটি পর্যাবৃত্ত আন্দোলন যার ফলে মাধ্যমের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে শক্তি স্থানান্তরিত হয়, কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলো নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে না তাকে তরঙ্গ বলা হয়। যখন পানিতে পাথর ফেলি, তখন পানির উপরিভাগে যে ঢেউ দেখতে পাই, তা তরঙ্গ । এই ঢেউগুলো পানির কণাগুলোকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায় না, বরং কণাগুলো নিজেদের জায়গায় ওঠানামা করে এবং এই ওঠানামার মাধ্যমে শক্তি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়।

তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য

তরঙ্গদৈর্ঘ্যঃ তরঙ্গের দুটি ক্রমিক শীর্ষ বা তলের মধ্যবর্তী দূরত্ব। একে (λ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়
আয়ামঃ তরঙ্গের সাম্য অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ বিচ্যুতি।
কম্পাঙ্কঃ এক সেকেন্ডে তরঙ্গের যে কটি দোলন হয়।  একে (f) দ্বারা প্রকাশ করা হয়
পর্যায়কালঃ  তরঙ্গের একবার দোলন সম্পূর্ণ করতে যে সময় লাগে। একে (T) দ্বারা প্রকাশ করা হয়
বেগঃ একক সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে। একে (v) দ্বারা প্রকাশ করা হয়

তরঙ্গের প্রকারভেদ

সাধারণত তরঙ্গ দুই প্রকার। যথাঃ

  • যান্ত্রিক তরঙ্গ
  • তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ

যান্ত্রিক তরঙ্গ

তরঙ্গ কাকে বলে

যে তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় তাকে যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে। যেমনঃ পানিতে সৃষ্টি তরঙ্গ, টানা তারের সৃষ্টি তরঙ্গ, স্প্রিং এ সৃষ্টি তরঙ্গ এবং সুর শলাকার শব্দ তরঙ্গ ইত্যাদি।

যান্ত্রিক তরঙ্গের প্রকারভেদ

তরঙ্গ সঞ্চালিত হওয়ার উপর ভিত্তি করে যান্ত্রিক তরঙ্গ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

অনুপ্রস্থ / আড় তরঙ্গঃ এই ধরনের তরঙ্গে মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গের গমনের দিকের সাথে লম্বভাবে দোলন করে। উদাহরণ: পানির তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ।
অনুদৈর্ঘ্য / দীঘল তরঙ্গঃ এই ধরনের তরঙ্গে মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গের গমনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে দোলন করে। উদাহরণ: শব্দ তরঙ্গ, স্প্রিংয়ে তৈরি তরঙ্গ।

অনুপস্থ ও অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য

ক্রমিক নং অনুপ্রস্থ তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
1 তরঙ্গে মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গের গমনের দিকের সাথে লম্বভাবে দোলন করে তাকে অনুপস্থ তরঙ্গ বলে। তরঙ্গে মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গের গমনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে দোলন করে তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে।
2 তরঙ্গ চূড়া ও তরঙ্গখাজ উৎপন্ন করে মাধ্যমে সঞ্চালিত হয় সংকোচন ও প্রসারণ এর মাধ্যমে তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়
3 তরঙ্গ চূড়া ও তরঙ্গ পাদ নিয়ে তরঙ্গ গঠিত হয় প্রসারণ নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত হয়ে থাকে
4 কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে এ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কঠিন তরল ও গ্যাসে সকল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়
5 এই তরঙ্গের ক্ষেত্রে সমবর্তন ঘটে এই তরঙ্গের সমবর্তন ঘটে না

 

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ

তরঙ্গ কাকে বলে

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ হল এক ধরনের শক্তি যা তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গগুলি শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগে চলতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণে বিভক্ত।

বৈশিষ্ট্য

তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও ফ্রিকোয়েন্সিঃ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং ফ্রিকোয়েন্সি পরস্পরের বিপরীত সমানুপাতিক। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম হলে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হয় এবং এর বিপরীতও সত্য।
শক্তিঃ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের শক্তি তার ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে। ফ্রিকোয়েন্সি যত বেশি হবে, তরঙ্গের শক্তি তত বেশি হবে।
বেগঃ শূন্য মাধ্যমে সকল তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ একই বেগে (আলোর বেগে) চলে।
ধ্রুবীকরণঃ তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের কম্পনের দিকের উপর ভিত্তি করে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গকে ধ্রুবীকরণ করা যায়।

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের ব্যবহার

এই তরঙ্গের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

যোগাযোগঃ রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল যোগাযোগ
চিকিৎসাঃ এক্স-রে, গামা রে, ইনফ্রারেড থেরাপি
উত্তাপঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেন
দূরবীনঃ টেলিস্কোপ
উপগ্রহঃ উপগ্রহ যোগাযোগ

তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালী

তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও ফ্রিকোয়েন্সির ভিন্নতার কারণে তাদেরকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই শ্রেণীকে তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালী বলে। বর্ণালীর বিভিন্ন অংশের তরঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও ব্যবহার রয়েছে।

রেডিও তরঙ্গঃ সবচেয়ে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। এটি রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোওয়েভঃ রেডিও তরঙ্গের চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের। মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং রাডারে ব্যবহৃত হয়।
ইনফ্রারেড তরঙ্গঃ মাইক্রোওয়েভের চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের। তাপ উৎপন্ন করে এবং রিমোট কন্ট্রোল, নাইট ভিশন ক্যামেরা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
দৃশ্যমান আলোঃ মানুষের চোখ দৃশ্যমান আলোকে দেখতে পায়। ইঁধুনি থেকে লাল বর্ণ পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের আলো দৃশ্যমান আলোর অন্তর্গত।
আল্ট্রাভায়োলেট রেঃ দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের। সূর্য থেকে আসা আল্ট্রাভায়োলেট রে ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
এক্স-রেঃ আল্ট্রাভায়োলেট রেয়ের চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের। হাড় ভেদ করে ছবি তুলতে ব্যবহৃত হয়।
গামা রেঃ সবচেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *