উপসর্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা তোমাদের মাঝে নতুন একটি ব্যাকরণ টপিক নিয়ে হাজির হলাম তা হল উপসর্গ। একটি বাংলা বাক্য তৈরি করতে ব্যাকরণের প্রতিটি অংশই জরুরি তেমনি এর ভিতর উপসর্গ গুরুত্বপূর্ন। সুতরাং আমরা জেনে নিই উপসর্গ কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কি কি, এই নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
উপসর্গ কাকে বলে
উপসর্গ হলো ধাতু বা শব্দের পূর্বে যোগ করা অব্যয়সূচক শব্দাংশ যাদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অর্থের দ্যোতনা তৈরির ক্ষমতা আছে। উপসর্গ যুক্ত হলে মূল শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, বা সংকোচন ঘটে।
বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে উপসর্গ
- উপসর্গ অব্যয় শব্দ, যার অর্থ পরিবর্তন হয় না।
- এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, তবে মূল শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ তৈরি করে।
- উপসর্গ সবসময় ধাতুর পূর্বে যোগ করা হয়।
- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ইত্যাদির পূর্বে উপসর্গ যোগ করা হয় না।
- কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ যোগ করলে ধাতুর প্রথম বর্ণের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন: ‘কর’ + ‘অ’ = ‘অকার’
- উপসর্গ যোগ করলে মূল শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, বা সংকোচন ঘটে।
- এটি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
উপসর্গের প্রকারভেদ
উপসর্গের মধ্যে বাংলা ভাষায় অর্ধ শতাধিক উপসর্গ রয়েছে ,তবে সাধারণত উপসর্গকে ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ
- বাংলা উপসর্গ
- তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ
- বিদেশি উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বাংলা খাঁটি উপসর্গ মোট ২১টি। যথাঃ
- অ- (নিন্দিত,অভাব, ক্রমাগত অর্থে)– অচেনা, অপয়া, অজানা, অঝোরে
- অঘা- (বোকা অর্থে)–অঘারাম, অঘাচণ্ডী
- অজ- (নিত্যান্ত, মন্দ অর্থে) )–অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুর
- অন- (অভাব, ছাড়া,অশুভ অর্থে))–অনাবৃষ্টি, অনাদর,অনাছিষ্টি, অনাচার,অনামুখোআ- (আহার, আহ্বান)
- আ- (অভাব,বাজে, অর্থে)– আধোয়া, আলুনি, আকাঠা, আগাছা
- আন- (না, বিক্ষিপ্ত অর্থে)– আনকোরা, আনচান, আনমোনা
- আড়- (বক্র্,আধা/প্রায়,বিশিষ্ট অর্থে )–আড়নয়,আড়পাগলা, আড়মোড়া,আড়কোলা (পাথালিকোলা), আড়গড়া (আস্তবল),
- আব-(অস্পষ্টতা অর্থে)– আবছায়া, আবডাল
- ইতি- (এ/এর ,পুরনো অর্থে)–ইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে,ইতিকথা, ইতিহাস
- ঊনা- ( কম অর্থে)–ঊনপাঁজুড়ে, ঊনিশ
- কদ- (নিন্দিত অর্থে)–কদর্য, কদাকার
- কু- (কুৎসিত অর্থে)–কুকর্ম, কুসংস্কার
- নি- (নাই/নেতি অর্থে)–নির্দেশ, নিরপরাধ
- পাতি- (ক্ষুদ্র অর্থে)–পাতিহারা, পাতিব্রত
- বি- (ভিন্নতা, নাই, নিন্দনীয় অর্থে)–বিপদ, বিশ্বাস
- ভর- (পূর্ণতা অর্থে)–ভরণপোষণ, ভরসা
- রাম- (বড়, উৎকৃষ্ট অর্থে)–রামধনু, রাজপ্রাসাদ
- স- (সাথে/সঙ্গে অর্থে-)–সময়, সত্য,সঠিক, সজোর,
- সা- (উৎকৃষ্ট অর্থে)–সহযোগিতা, সসম্মান
- সু- (উত্তম অর্থে)–সুখ, সুন্দর
- হা- (অভাব অর্থে)–হাস্য, হারানো,হাভাতে, হাঘরে
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ কাকে বলে
বাংলা ভাষায় প্রচুর সংস্কৃত থেকে আগত উপসর্গ ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে তৎসম উপসর্গ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ২০ টি তৎসম উপসর্গ ব্যবহৃত হয়। যথাঃ
- প্র-(প্রকৃষ্ট, সম্মুখ,খ্যাতি,গতি )=প্রচলন, প্রস্ফুটিত,প্রতাপ, প্রভাব,প্রবেশ, প্রস্থা,
- পরা-(আতিশয্য,বিপরীত অর্থে)=পরাকান্ত, পরায়ণ,পরাজয়, পরাভব
- অপ-(বিপরীত,নিকৃষ্ট,স্থানান্তর,বিকৃত অর্থে) =অপকার, অপচয়, অপবাদ,অপকর্ম, অপসৃষ্টি,অপহরণ, অপনোদন,অপমৃত্যু
- সম-(সম্মুখরূপে,সম্মুখে অর্থে)=সমৃদ্ধ, সমাদর, সমাগত
- নি-(নিষেধ,নিশ্চয়,আতিশয্য,ভাব অর্থে)=নিবৃত্তি,নির্ণয়,নিদাঘ, নিদারুন,নিষ্কাম
- অনু-(পশ্চাৎ,সাদৃশ্য্,সঙ্গে অর্থে)=অনুজ, অনুচর, অনুতাপ,অনুরূপ, অনুকার, অনুকূল
- অব-(হীনতা,সম্যকভাবে,অধোমুখিতা,অল্পতা অর্থে)=অবমাননা,অবতরণ, অবরোহণ,, অবসান, অবেলা
- নির-(অভাব,নিশ্চয়্,বাহির, বহির্মুখিতা অর্থে)= নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়, নির্ধন,নির্ণয়, নির্ভর,নির্বাসন
- দুর-(মন্দ, কষ্টসাধ্য অর্থে)= দর্দশা, দুর্নাম,দুর্গম, দুরতম্য
- বি-(বিশেষরূপে ,অভাব্,গতি,অপ্রকৃস্থ অর্থে)= বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র,বিশৃঙ্খল, বিফল,বিচরণ, বিপর্যয়
- অধি-(আধিপত্য,উপরি,ব্যাপ্তি অর্থে)= অধিবাসী, অধিপতি,অধিষ্ঠান,অধিবাস, অধিগত
- সু-(উত্তর ,সহজ অর্থে)= সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল,সুসাধ্য, সুলভ
- উৎ-(ঊর্ধ্বমুখিতা ,আতিশয্য,প্রস্তুতি,অপকর্ষ অর্থে)= উৎক্ষিপ্ত, উদগ্রীব, উত্তোন,উৎসুক, উৎপীড়ন, উচ্চারণ,উৎকট
- পরি-(বিশেষরূপ,শেষ,সম্মুখরূপে,চতুর্দিক অর্থে)= পরিপূর্ণ, পরিবর্তন, পরিশেষ, পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমণ্ডল)
- প্রতি-( সদৃশ ,বিরোধ,পৌনঃ পৌনঃ অর্থে)= প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি,প্রতিবাদ, প্রতি দিন, প্রতি মাস
- অতি-(আতিশয্য অর্থে,অতিক্রম অর্থে)= অত্যাচার, অতিশয়,অতিমানব, অতি প্রাকৃত
- অপি-(আবার,পুনরায়,অতিরিক্ত,সন্দেহ)= অপিনিয়তী, অপিনির্ণয়
- অভি-( সম্যক ,গমন,সম্মুখ, দিক অর্থে)=অভিজ্ঞ, অভিভূত,অভিযান, অভিসার, অভিবাদন
- উপ-(সদৃশ,সামীপ্য,ক্ষুদ্র ,বিশেষ অর্থে) = উপকূল, উপকণ্ঠ,উপবন,উপসাগর, উপনেতা, উপভোগ
- আ-(পর্যন্ত ,ঈষৎ,বিপরীত অর্থ)= আকণ্ঠ, আমরণ, আভাস,আদান, আগমন
বিদেশি উপসর্গ
বিদেশি উপসর্গ মোট ১৯ টি।এই বিদেশী উপসর্গের মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ
- ফারসি উপসর্গ
- আরবি উপসর্গ
- ইংরেজি উপসর্গ
- উর্দু-হিন্দি উপসর্গ
ফারসি উপসর্গ মোট১০টি যথাঃ
কার-(কাজ অর্থে)= কারসাজি, কারচুপি,কারবার, কারদানি
দর-(মধ্যস্থ, অধীন অর্থে)= দরপত্তনি, দরপাট্টা, দরদালাল
না-(না অর্থে)=নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
নিম-(আধা অর্থে)= নিমরাজি, নিমখুন
ফি-(প্রতি অর্থে)=, ফি-হপ্তা, ফি-বছর, ফি-সন, ফি-মাস
বদ-(মন্দ অর্থে)=বদরাগী, বদমাশ, বদহজম, বদনাম
ব-(সহিত অর্থে)= বনাম, বকলম
বর-(বাইরে, মধ্যে অর্থে)=বরদাস্ত, বরখেলাপ, বরবাদ
বে-(না বোধক অর্থে)=বেআক্কেল, বেকসুর, বেকায়দা, বেগতিক,বেতার, বেকার
কম-(স্বল্প অর্থে)=কমজোর, কমবখ্ত।
আরবি উপসর্গ মোট ৪ টি যথাঃ
আম-(সাধারণ অর্থে)=আমদরবার, আমমোক্তার
খাস -(বিশেষ অর্থে)= খাসখবর, খাসকামরা, খাসদরবার
লা-(না অর্থে)= লাখেরাজ, লাওয়ারিশ, লাপাত্তা
গর-(অভাব অর্থে)= গরহাজির, গররাজি
ইংরেজি উপসর্গ মোট ৪ টি যথাঃ
ফুল-(পূর্ণ অর্থে)= ফুল-শার্ট, ফুল-বাবু, ফুল-প্যান্ট
হাফ -(আধা অর্থে)= হাফ-হাতা, হাফ-টিকেট
হেড-(প্রধান অর্থে)= হেড-মাস্টার, হেড-অফিস,
সাব-(অধীন অর্থে)= সাব-জজ, সাব-ইন্সপেক্টর।
হিন্দী/উর্দু উপসর্গ মোট ১ টি যথাঃ
হর-(প্রত্যেক অর্থে)= হরমাহিনা, হরকিসিম, হরহামেশা।
আশা করি ,উপরের তথ্যগুলো আপনাদের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করবে। সুতরাং উপসর্গ নিয়ে যদি আর কোন মতামত থাকে অথবা যেকোনো বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে হলে আমাদেরকে নিজে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ‘ধন্যবাদ’