পরিবেশ কাকে বলে?কত প্রকার ও কি কি?

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, ভালো পরিবেশ, সুস্থ পরিবেশ, সুন্দর পরিবেশ, কে এই বা না চায়। আমরা সবাই চাই সুন্দর একটি পরিবেশে বসবাস করতে এবং তা বর্তমানে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। তাহলে চলো জেনে নেওয়া যাক সুস্থ সুন্দর পরিবেশটা কিভাবে হলো আর পরিবেশ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো পরিবেশ কাকে বলেঃ

পরিবেশ কাকে বলে

পরিবেশ বলতে আমরা যে সকল জীবন্ত ও নির্জীব বস্তু দ্বারা বেষ্টিত থাকি তার সমষ্টি বোঝায়। এটিতে বায়ু, পানি, মাটি, খনিজ সম্পদ, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ সহ সকল কিছু অন্তর্ভুক্ত।
অন্যভাবে বলতে গেলে, পরিবেশ বলতে পারিপার্শ্বিক পরিবেষ্টনকারী অবস্থাকে বোঝায়।

 পরিবেশ কাকে বলে /পরিবেশ এর উৎপত্তি

পরিবেশ কাকে
বলে

পরিবেশ শব্দটি জার্মান শব্দ “environ” থেকে এসেছে, যার অর্থ “পরিবেষ্টন করা”। বায়োফিজিক্যাল পরিবেশ হল যেখানে সজীব এবং নির্জীব উপাদানগুলি একসাথে থাকে এবং একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে।

এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ১৫শ শতাব্দীতে। তখন থেকে, এটি আমাদের চারপাশের জীবন্ত এবং নির্জীব বস্তুগুলিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পরিবেশের প্রকারভেদ

পরিবেশকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ শ্রেণীবিভাগগুলি হল:

  • ভৌগোলিক পরিবেশ: এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে শ্রেণীবদ্ধ করে, যেমন পর্বতমালা, নদী, মরুভূমি এবং বন।
  • জলবায়ু পরিবেশ: এটি একটি অঞ্চলের জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে শ্রেণীবদ্ধ করে, যেমন গ্রীষ্মমন্ডলীয়, মরুভূমি, এবং শীতপ্রধান।
  • জৈব পরিবেশ: এটি একটি অঞ্চলে উপস্থিত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রজাতির উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে শ্রেণীবদ্ধ করে।
  • মানবিক পরিবেশ: এটি মানব কার্যকলাপের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে শ্রেণীবদ্ধ করে। পরিবেশ, যেমন শহুরে এলাকা, গ্রামীণ এলাকা এবং শিল্প এলাকা।
  • জলীয় পরিবেশ: এগুলি জলের পরিবেশ, যেমন মহাসাগর, হ্রদ, নদী এবং জলাভূমি।
  • স্থলজ পরিবেশ: এগুলি স্থলের পরিবেশ, যেমন বন, ঘাসভূমি, মরুভূমি এবং আর্কটিক টুন্দ্রা।
  • ভূগর্ভস্থ পরিবেশ: এগুলি মাটির নিচের পরিবেশ, যেমন গুহা, অ্যাকুইফার এবং গভীর সমুদ্রের ভেন্ট।

পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি

জৈব উপাদান

  • জীবন্ত প্রাণী: স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ, উভয়চর, মৎস্য, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, জীবাণু, ইত্যাদি।
  • উদ্ভিদ: বৃক্ষ, লতা, ঝোপ, ঘাস, শেওলা, ইত্যাদি।

অজৈব উপাদান

  • বায়ু: অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, ইত্যাদি।
  • পানি: নদী, সাগর, মহাসাগর, ভূগর্ভস্থ পানি, বৃষ্টিপাত, ইত্যাদি।
  • মাটি: খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, পানি, বায়ু, ইত্যাদি।
  • খনিজ সম্পদ: কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ধাতু, খনিজ পদার্থ, ইত্যাদি।
  • সূর্যালোক: পৃথিবীতে জীবনের জন্য অপরিহার্য।
  • তাপমাত্রা: পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে।
  • বৃষ্টিপাত: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পরিবেশের গুরুত্ব

  • জীবনের জন্য অপরিহার্য: পরিবেশ আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত মৌলিক উপাদান সরবরাহ করে, যেমন বায়ু, পানি, খাদ্য এবং আশ্রয়।
  • জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: পরিবেশ গ্রহের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন, মহাসাগর এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
  • জীববৈচিত্র্য রক্ষা: পরিবেশ বিভিন্ন ধরণের প্রাণী এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল। জীববৈচিত্র্য বজায় রাখা গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য কারণ এটি খাদ্য শৃঙ্খল ভারসাম্য রক্ষা করে, পরিবেশগত পরিষেবা প্রদান করে এবং নতুন ওষুধ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে।
  • মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ: প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে, মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে এবং শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে: পরিবেশ পর্যটন, কৃষি, মৎস্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশের সুবিধা

মৌলিক চাহিদা পূরণ:

  • বায়ু: শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে।
  • পানি: পান করার, রান্না করার, পরিষ্কার করার এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজন।
  • খাদ্য: উদ্ভিদ এবং প্রাণী আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে।
  • আশ্রয়: বন, গুহা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল আমাদের আশ্রয় প্রদান করে।

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:

  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: বন, মহাসাগর এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ: বন এবং মহাসাগর বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রশমিত: বন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান বন্যা, খরা এবং ঝড়ের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষা:

  • বিভিন্ন প্রজাতির আবাসস্থল: পরিবেশ বিভিন্ন ধরণের প্রাণী এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল।
  • খাদ্য শৃঙ্খল ভারসাম্য রক্ষা: জীববৈচিত্র্য খাদ্য শৃঙ্খল ভারসাম্য রক্ষা করে গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
  • পরিবেশগত পরিষেবা প্রদান: জীববৈচিত্র্য পরিবেশগত পরিষেবা প্রদান করে যেমন বায়ু এবং জল পরিশোধন, পরাগায়ন এবং বন্যার নিয়ন্ত্রণ।
    নতুন ওষুধ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে: জীববৈচিত্র্য নতুন ওষুধ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে।

মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ:

  • মানসিক চাপ কমায়: প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে: নিয়মিত বাইরে বের হওয়া এবং ব্যায়াম করা শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
    জীবনযাত্রার মান উন্নত করে: একটি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে:

  • পর্যটন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
  • কৃষি: উর্বর মাটি এবং পানি কৃষিকাজের জন্য অপরিহার্য।

পরিশেষে বলা যায়,পরিবেশ আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের অক্সিজেন, খাদ্য, পানি এবং আশ্রয় প্রদান করে। এটি আমাদের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।পরিবেশ দূষণ, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য মানবিক কার্যকলাপের কারণে বর্তমানে বিপদে রয়েছে। পরিবেশের এই ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের সকলেরই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জানতে চাইলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন “ধন্যবাদ”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *