বিন্দু কাকে বলে? বিন্দুর বৈশিষ্ট্য
আজকে আমরা জানবো বিন্দু কাকে বলে কতপ্রকার ও কি কি । যেহেতু জ্যামিতিতে, বিন্দু এবং রেখা হল মৌলিক ধারণা, তাই আমাদের বিন্দু সম্পর্কে জানতে হবে, তাছাড়া বিন্দু নিয়ে পরিক্ষায় প্রশ্ন থাকতে পারে।
বিন্দু কাকে বলে?
যার দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা বা বেধ কিছুই নেই, শুধু অবস্থান আছে তাকে বিন্দু বলে। দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা না থাকায় এটি জ্যামিতির একটি মাত্রাশূন্য মৌলিক উপাদান।
বিন্দুর প্রকারভেদ
- সমরেখ বিন্দু
- অসমরেখ বিন্দু
- সমতলীয় বিন্দু
- অসমতলীয় বিন্দু
- সমবর্তী বিন্দু
সমরেখ বিন্দু
তিন বা ততোধিক বিন্দু যখন একই সরলরেখার উপর অবস্থান করে, তাদের সমরেখ বিন্দু বলে।
A, P, Q, B – বিন্দুগুলো সমরেখ বিন্দু। তবে দুটি বিন্দু হলে সর্বদাই সমরেখ হয়।
অসমরেখ বিন্দু
যখন বিন্দুগুলো একই সরলরেখার উপর অবস্থান করে না, তাদের অসমরেখ বিন্দু বলে।
M, N, O, P, Q – বিন্দুগুলো একই সরল রেখায় অবস্থিত নয়, তাই এগুলো অসমরেখ বিন্দু।
সমতলীয় বিন্দু
চার বা তার বেশি বিন্দু একই সমতলে অবস্থান করলে, তাকে সমতলীয় বিন্দু বলে।
A, B, C, D – বিন্দুগুলো একই সমতলে অবস্থিত বলে সমতলীয় বিন্দু।
অসমতলীয় বিন্দু
চার বা তার বেশি বিন্দু যখন একই সমতলে অবস্থান না করে, তাকে অসমতলীয় বিন্দু বলে।
এখানে, A,B,C একটি তলে, E,F অন্য তলে এবং R,D আরেকটি তলে অবস্থিত। তাই A,B,C,D,E,F,R বিন্দুগুলো অসমতলীয় বিন্দু। লুডুর ছক্কার বিন্দুগুলো এভাবেই অসমতলীয় বিন্দু।
সমবিন্দু
দুই বা ততোধিক সরলরেখা একটি বিন্দুতে মিলিত হলে, সেই মিলন বিন্দুকে সমবিন্দু বা সাধারন বিন্দু বলে। এবং সমবিন্দুতে মিলিত সরলরেখা গুলোকে সমবিন্দু সরলরেখা বলে।
এখানে তিনটি সরলরেখা P বিন্দুতে মিলিত হয়েছে, তাই P একটি সমবিন্দু।
বিন্দুর বৈশিষ্ট্য
- বিন্দুর শুধু অবস্থান আছে। বিন্দুর দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই।
- বিন্দু মাত্রাশূন্য।
- জ্যামিতির একটি মৌলিক উপাদান।
- দুটি রেখা পরস্পর ছেদ করলে ছেদবিন্দুতে একটি বিন্দু তৈরি হয়।
- অসংখ্য বিন্দু পাশাপাশি বসে একটি রেখা গঠন করে।
- একটি বিন্দুর চলার পথই রেখা।
- বিন্দু সোজা পথে চললে সরলরেখা।
- বিন্দু বাকা হয়ে চললে বক্ররেখা।
- একটি রেখাকে ছোট করতে থাকলে বিন্দুতে পরিনত হয়।
- দ্বি-মাত্রিক জ্যামিতি বা সমতল জ্যামিতি এবং ত্রি-মাত্রিক জ্যামিতি বা ঘন জ্যামিতিতে বিন্দুর অবস্থান লক্ষনীয়।
- দ্বি-মাত্রিক জ্যামিতিতে বিন্দুর স্থানাঙ্ক x,y দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- ত্রি-মাত্রিক জ্যামিতিতে বিন্দুর স্থানাঙ্ক x,y,z দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- অসংখ্য বিন্দু একসাথে চারিপাশে বসে তল গঠন করে।
বাস্তব জীবনে বিন্দুর ব্যবহার
বিন্দু, গণিতের একটি মৌলিক ধারণা হলেও, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ অসংখ্য। যদিও একটি বিন্দুর কোনো মাত্রা নেই, তবুও এর সাহায্যে আমরা বিভিন্ন জটিল ধারণা ও ব্যবস্থাকে সহজে বুঝতে পারি। আসুন দেখি বাস্তব জীবনে বিন্দুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার:
মানচিত্র ও নকশায়
স্থান নির্দেশঃ মানচিত্রে একটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট স্থানকে নির্দেশ করে। যেমন, একটি শহর, একটি ভবন বা একটি নির্দিষ্ট জায়গা।
স্থানাঙ্কঃ ভূগোল ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে, একটি বিন্দুর স্থানাঙ্কের সাহায্যে এর অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
পথ নির্দেশঃ GPS সিস্টেমে, আপনার অবস্থান এবং গন্তব্যস্থলকে বিন্দু হিসেবে দেখানো হয় এবং একটি পথ নির্দেশ করা হয়।
গ্রাফ ও চার্টে
তথ্য উপস্থাপনা: বিভিন্ন ধরনের তথ্যকে দৃশ্যমান করার জন্য গ্রাফ ও চার্টে বিন্দু ব্যবহার করা হয়। যেমন, একটি লাইন গ্রাফে বিভিন্ন সময়ে কোনো মানের পরিবর্তন দেখানোর জন্য বিন্দু ব্যবহার করা হয়।
সম্পর্ক নির্দেশ: দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যকার সম্পর্ককে স্ক্যাটার প্লটে বিন্দুর সাহায্যে দেখানো হয়।
কম্পিউটার গ্রাফিক্সে
ছবি তৈরিঃ কম্পিউটার গ্রাফিক্সে, ছবিগুলো হাজার হাজার বিন্দুর সমষ্টি। এই বিন্দুগুলোকে পিক্সেল বলা হয়।
3D মডেলিংঃ ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরির ক্ষেত্রেও বিন্দু ব্যবহার করা হয়।
জ্যামিতি ও গণিতে
আকার তৈরিঃ জ্যামিতিতে, একটি বিন্দু থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকার তৈরি করা হয়।
সমীকরণের সমাধানঃ গণিতে, একটি সমীকরণের সমাধানকে একটি বিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
শিল্প ও ডিজাইনে
পেইন্টিং ও ড্রয়িংঃ শিল্পীরা একটি ছবিকে ছোট ছোট বিন্দুর সমষ্টি হিসেবে কল্পনা করে কাজ করে।
প্যাটার্ন ডিজাইনঃ বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন ডিজাইনে বিন্দুর ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য ক্ষেত্রে
কোডিংঃ কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে, একটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট অবস্থানকে নির্দেশ করতে পারে।
বিজ্ঞানঃ বিভিন্ন বিজ্ঞানের পরীক্ষায় ডাটা সংগ্রহের জন্য বিন্দু ব্যবহার করা হয়।