সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা তোমাদের মাঝে বাংলা ব্যাকরণের একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমরা শিখতে চলেছি সমাস কাকে বলে ? সমাস কত প্রকার ও কি কি? তাহলে চলো জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

সমাস কাকে বলে

সমাস বলতে বোঝায় পরস্পর অর্থসম্বন্ধযুক্ত দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে এক পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া।

অর্থাৎ, যখন দুটি বা তার বেশি শব্দ মিলে একটা নতুন শব্দ তৈরি করে, তখন তাকে সমাস বলে। এই নতুন শব্দটিতে আগের শব্দগুলোর অর্থগুলো একসাথে মিশে যায় এবং একটা নতুন অর্থ তৈরি করে। যেমনঃ

  • রাজা + কুমার = রাজকুমার (এখানে “রাজা” ও “কুমার” দুটি শব্দ মিলে “রাজকুমার” নতুন শব্দ তৈরি করেছে। এর অর্থ “রাজার ছেলে”)
  • দুঃখ + প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত (এখানে “দুঃখ” ও “প্রাপ্ত” দুটি শব্দ মিলে “দুঃখপ্রাপ্ত” নতুন শব্দ তৈরি করেছে। এর অর্থ “যিনি দুঃখ পেয়েছেন”)

ভাষাতত্ত্ববিদ গণ আরো বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা দিয়েছেন

  • পরস্পার সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একত্রে মিলে তৈরি হয় সমাস।
  • পরস্পর অন্বয় যুক্ত দুই বা ততোধিক সামাস্টিক রূপকে বলা হয় সমাস।

সমাসের প্রকারভেদ

সমাস কাকে বলে

 

সাধারণত সমাস মোট ৬ প্রকার। যথাঃ

  • দ্বন্দ্ব সমাস 
  • দ্বিগু সমাস 
  • কর্মধারয় সমাস
  • তৎপুরুষ সমাস 
  • বহুব্রীহি সমাস
  • অব্যয়ীভাব সমাস

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে

যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয় (কখনো বিয়োজক) দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ

  • মা ও বাবা= মা-বাবা  ,এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাবা’। ব্যাসবাক্যে মা ও ‘বাবা’ দুজনকেই সমান প্রধান্য দেয়া হয়েছে, দুটোতেই শূন্য বিভক্তি রয়েছে এবং দুটো পদই বিশেষ্য পদ। সুতরাং তিনটি শর্তই পূর্ণ হয়েছে। এছাড়াও ব্যাসবাক ‘ও’ রয়েছে।
  • তাল ও তমাল = তাল-তমাল,
  •  দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম।

অলুক দ্বন্দ্ব: যেখানে দ্বন্দ্ব সমাসের চিহ্ন লুপ্ত হয়। যেমন: রামনগর, নবদ্বীপ, দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে,

বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস: যেখানে তিন বা ততোধিক সমস্যমান পদ থাকে। যেমন: সাহেব-বিবি-গোলাম, হাত-পা-নাক-মুখ-চোখ

বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস: যেখানে দুটি সমস্যমান পদের অর্থ বিপরীত হয়। যেমন: ছেলে-মেয়ে, গরম-ঠান্ডা

দ্বিগু সমাস কাকে বলে

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমনঃ

  • অষ্ট + ভুজ = অষ্টভুজ (এখানে “অষ্ট” (আট) সংখ্যাবাচক শব্দ এবং “ভুজ” বিশেষ্য পদ। সমাসনিষ্পন্ন পদ “অষ্টভুজ” বিশেষ্য পদ এবং এর অর্থ “আট ভুজ”)
  • তিন মাথার সমাহার = তেমাথা,
  • তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল,
  • চৌ․রাস্তার সমাহার= চৌরাস্তা,
  • শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী

কর্মধারয় সমাস

যে সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত হয় এবং সমাসের অর্থ পূর্বপদ ও পরপদের অর্থের সমন্বয়ে গঠিত হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

  • নীল + পদ্ম = নীলপদ্ম (এখানে “নীল” বিশেষণ এবং “পদ্ম” বিশেষ্য। সমাসনিষ্পন্ন পদ “নীলপদ্ম” বিশেষ্য পদ এবং এর অর্থ “নীল রঙের পদ্ম”)
  • শান্ত + সিদ্ধ = শান্তসিদ্ধ (এখানে “শান্ত” বিশেষণ এবং “সিদ্ধ” বিশেষ্য। সমাসনিষ্পন্ন পদ “শান্তসিদ্ধ” বিশেষ্য পদ এবং এর অর্থ “যিনি শান্তভাবে সিদ্ধি লাভ করেছেন”)

কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ:   কর্মধারয় সমাসকে বিভিন্ন ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা যায় যথাঃ

  • উপমান কর্মধারয়
  • উপমিত কর্মধারয়
  • রূপক কর্মধারয়
  • মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

উপমান কর্মধারয়ঃ যেখানে সমাসনিষ্পন্ন পদটি উপমানের অর্থ বহন করে। যেমন: সিংহপুরুষ (সিংহের মতো শক্তিশালী পুরুষ)

উপমিত কর্মধারয়ঃ যেখানে সমাসনিষ্পন্ন পদটি উপমিতের অর্থ বহন করে। যেমন: মৃগনয়নী (মৃগের মতো চোখওয়ালা নারী)

রূপক কর্মধারয়ঃ যে সমাসে উপমান পদ পূর্বে বসে ও উপমেয় পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ সুখ  রূপ সাগর = সুখসাগর ,জ্ঞান রূপ বৃক্ষ = জ্ঞানবৃক্ষ

মধ্যপদলোপী কর্মধারয়ঃ যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ (কারক চিহ্ন) লুপ্ত হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ সিংহের চিহ্নিত আসন= সিংহাসন,  স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ

তৎপুরুষ সমাস

যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লুপ্ত হয়ে পরপদের সাথে মিলিত হয় এবং সমস্ত পদের অর্থ একত্রিত হয়ে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ রাম ‘এর’ প্রসাদ = রামপ্রসাদ ,মাটি ‘র’ ঘর = মাটিরঘর

তৎপুরুষ সমাসের কিছু শ্রেণীবিভাগ

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস সাধারণত পূর্বপদের বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ পায়। যেমনঃ দুঃখকে প্রাপ্তি= দুঃখ প্রাপ্তি, বইকে পড়া= বই পড়া

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস :যেখানে পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা,দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লুপ্ত হয়। যেমনঃ গঙ্গা দিয়ে ধার= গঙ্গাধার, পুষ্প ধারা অঞ্জলি =পুষ্পাঞ্জলি,

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : যেখানে পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি(কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপ পায়। যেমনঃ রামের নির্মিত বাড়ি=রামের বাড়ি, বিয়ের জন্য পাগল= বিয়ে পাগল

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস :যে তৎপুরুষ সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি পঞ্চমী বিভক্তি (কে, কাকে, কোথায়, কখন, কেন) ধারণ করে, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস :যেখানে পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর)  লুপ্ত হয়। যেমনঃ শ্যাম্য এর বই= শ্যামবই ,পুষ্পের সে․রভ = পুষ্পসৌরভ।

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস :যেখানে পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়,তে) লুপ্ত হয়। যেমনঃ দারিয়াতে পাড়= দাড়িয়েপাড়

নঞ্ তৎপুরুষ সমাস : না বাচক যে নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়)  পূর্বে বসে।যেমনঃ নকাতর=অকাতর , নয় ধর্ম = অধর্ম।

অলুক তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদে বিভক্তি চিহ্ন প্রকাশ পায় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ চাঁদ + (ের) + আলো = চাঁদনি (এখানে “চাঁদের” মধ্যপদ “ের” লুপ্ত হয়েছে। সমাসনিষ্পন্ন পদ “চাঁদনি” বিশেষ্য পদ এবং এর অর্থ “চাঁদের আলো”)

উপপদ তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে উত্তরপদের বিভক্তি লুপ্ত হয়ে পূর্বপদের সাথে মিলিত হয় এবং সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ দেশ  (কে)  ভালোবাসা = দেশপ্রেম ,পিতা (কে) শ্রদ্ধা = পিতৃশ্রদ্ধা

বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমনঃ

  • বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার= বহুব্রীহি (এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ধান’ কোনোটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে।)
  • খোশ মেজাজ যার= খোশমেজাজ (এখানে ‘খোশ’ অর্থ ‘আনন্দিত’ এবং ‘মেজাজ’ অর্থ ‘চরিত্র’। ‘খোশমেজাজ’ বলতে বোঝায় যার চরিত্র আনন্দিত।)
  • দুঃখিত মন যার= দুঃখিতমন (এখানে ‘দুঃখিত’ অর্থ ‘বিষণ্ণ’ এবং ‘মন’ অর্থ ‘চিত্ত’। ‘দুঃখিতমন’ বলতে বোঝায় যার চিত্ত বিষণ্ণ।)

বহুব্রীহি সমাসের কিছু শ্রেণীবিভাগ
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি :
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস হলো এমন একধরনের বহুব্রীহি সমাস, যেখানে একটি সংখ্যাবাচক শব্দ একটি বিশেষ্য পদ ও পূর্বপদের সংখ্যা নির্দেশ করে এবং পরপদের বস্তু বা বিষয়ের পরিমাণ বোঝায়। যেমনঃ চার + (টি) + হাত = চারহাতি , তে + (টা) + পায়া = তেপায়া

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি :সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হলো পৃথকভাবে নিজেদের অর্থ বজায় রাখে কিন্তু একত্রে মিলে সমাসনিষ্পন্ন পদের নতুন অর্থ সৃষ্টি করে। যেমনঃ খোশ + (মেজাজ) = খোশমেজাজ (এখানে ‘খোশ’ অর্থ ‘আনন্দিত’ এবং ‘মেজাজ’ অর্থ ‘চরিত্র’। ‘খোশমেজাজ’ বলতে বোঝায় যার চরিত্র আনন্দিত।)

ব্যতিহার বহুব্রীহি : ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হলো এমন একধরনের বহুব্রীহি সমাস, যেখানে সমাসনিষ্পন্ন পদটি পূর্বপদ ও পরপদের পারস্পরিক ক্রিয়াকে বোঝায়।যেমনঃ চোখে চোখ রেখে দেখা= চোখাচোখি ,কানে কানে গোপন কথা বলা= কানাকানি

অব্যয়ীভাব সমাস

যে সমাসে অব্যয় পদের সাথে বিশেষ্য পদের সমাস হয় এবং অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ

  • সকাল + (বেলা) = সকালবেলা (এখানে “সকাল” অব্যয় এবং “বেলা” বিশেষ্য। “সকালবেলা” বলতে বোঝায় সকালের সময়।)
  • বিকেল + (বেলা) = বিকেলবেলা (এখানে “বিকেল” অব্যয় এবং “বেলা” বিশেষ্য। “বিকেলবেলা” বলতে বোঝায় বিকেলের সময়

একটি বাক্য তৈরি করতে সমাস একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা আপনাদেরকে উপরে তথ্য দিয়ে আশা করি খুব সহযোগিতা করতে পারব তো সমাস সম্পর্কে আরো কোন তথ্য পেতে হলে নিজে কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারেন ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *