উদ্ভিদ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?
আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, উদ্ভিদ বিষয়টি জানতে সবাই ইচ্ছুক থাকেন, এটা কিভাবে এলো, এটা দ্বারা কি হয়, পরিবেশকে কিভাবে রক্ষা করে ইত্যাদি, তো আজকে আমরা হাজির হয়েছি তোমাদের মাঝে এই সব বিষয়ের খোলামেলা তথ্য নিয়ে, তাহলে চলো জেনে নেওয়া যাক উদ্ভিদ কাকে বলে ?উদ্ভিদ কত প্রকার ও কি কি? এই বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
উদ্ভিদ কাকে বলে
মূল, কান্ড ও পাতাযুক্ত জীব, যারা সূর্যালোক থেকে শক্তি গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজস্ব খাদ্য তৈরি করে এবং স্থির জীবনযাপন করে তাদেরকে উদ্ভিদ বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, উদ্ভিদ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে দুটি শব্দ থেকে = উৎ এবং ভিদ
উৎ অর্থ উপরে ওঠা এবং ভিদ অর্থ হল ভেদ করা অথবা মাটি ভেদ করা.
উদ্ভিদ হল — ওইসব তৃণলতা বা গুল্মাদি, যা মাটি ফুঁড়ে যে কোন স্থানে বের হয়।
কিছু উদাহরণ উদ্ভিদেঃ
- গাছপালা: আম, জাম, নারকেল, শাল, বট, পাইন ইত্যাদি।
- লতা গাছ: পানাফল, কাঁঠাল, লেবু, আঙ্গুর, জলপাই ইত্যাদি।
- ছোট উদ্ভিদ: ঘাস, ফার্ন, শৈবাল ইত্যাদি।
উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য
- বহুকোষী: উদ্ভিদ অনেক কোষ দ্বারা গঠিত।
- কোষপ্রাচীর: উদ্ভিদ কোষের চারপাশে কোষপ্রাচীর থাকে।
- সালোকসংশ্লেষণ: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যালোক, পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে।
- স্থির: উদ্ভিদ স্থির জীব, অর্থাৎ তারা নিজেদের ইচ্ছায় সরতে পারে না।
- ক্লোরোফিল: উদ্ভিদের পাতাগুলোতে ক্লোরোফিল থাকে যা তাদের সবুজ রঙ প্রদান করে।
- বিভিন্ন আকার ও আকৃতি: উদ্ভিদ বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হতে পারে।
উদ্ভিদের প্রকারভেদ
আমাদের চারিদিকে ও এই পৃথিবীতে অগনিত উদ্ভিদের বসবাস। উদ্ভিদ ছাড়া পৃথিবীর জীবজগৎ অসম্পূর্ণ। জলে,স্থলে, পাহাড় পর্বতে, মরুভূমিতে সর্বত্র উদ্ভিদ অবস্থান করছে। উদ্ভিদের মধ্যে নানান বৈচিত্র্যতা দেখা যায়। কিছু উদ্ভিদের মূল,কান্ড, পাতার ভাগ থাকে কিছু উদ্ভিদের আবার থাকেও না। আবার কিছু উদ্ভিদের ফুল ও ফল হয় আবার করোরও হয়না। এইরকম বিভিন্ন গঠনগত, বাসস্থানগত, জীবনযাত্রা ইত্যাদির পার্থক্য দেখা যায়।
প্রথমত উদ্ভিদ রাজ্যকে ফুল ও ফলের উপস্থিতি অনুযায়ী এদেরকে ভাগ করা হয় যথাঃ
- অপুষ্পক উদ্ভিদ(Cryptogame)
- সপুষ্পক উদ্ভিদ(Phanerograms)
অপুষ্পক উদ্ভিদ (Cryptogame) কাকে বলে
সাধারণত যেসব উদ্ভিদের ফুল ও ফল হয় না তাদের বলা হয় অপুষ্পক উদ্ভিদ। যেমনঃ এককোশী শৈবাল, শুশনি ইত্যাদি।
অপুষ্পক উদ্ভিদকে সাধারণত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ
- সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ (Thallophyta)
- মসজাতীয় উদ্ভিদ (Bryophyta)
- ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ(Pteridophyta)
সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ (Thallophyta):যে সমস্ত উদ্ভিদের দেহ অত্যন্ত সরল প্রকৃতির এবং তা মূল কান্ড ও পাতায় বিভেদিত নয়। এই উদ্ভিদকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমনঃ শৈবাল(Algae) ও ছত্রাক (Fungi)।
শৈবাল(Algae):যে সব জলজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জকের মাধ্যমে খাদ্য তৈরী করতে পারে তাদের শৈবাল(Algae) বলে।
ছত্রাক (Fungi): সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জকের অনুপস্থিতিতে ছত্রাক (Fungi) উদ্ভিদগোষ্ঠীর উদ্ভিদ বর্নহীন ও পরভোজী।
মসজাতীয় উদ্ভিদ (Bryophyta):এই জাতীয় উদ্ভিদগোষ্ঠীর স্বাধীন লিঙ্গধর উদ্ভিদ তুলনামূলকভাবে জটিল। যৌন জননের সময় এই উদ্ভিদ বন্ধ্যাপ্রাচীরযুক্ত বহুকোশী যৌন জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়। যেমন: pellia, Riccia
ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ(Pteridophyta):এইজাতীয় উদ্ভিদ হল অপুষ্পক উদ্ভিদগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত উদ্ভিদগোষ্ঠী। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের রেণুধর উদ্ভিদ স্বাধীন, স্বনির্ভর, সংবহন কলা সমন্বিত এবং মূল, কান্ড ও পাতায় বিভেদিত। তাই ফার্ন এদেরকে জাতীয় উদ্ভিদ বলা হয়।
সপুষ্পক উদ্ভিদ(Phanerograms):
যেসব উদ্ভিদের ফুল ও ফল হয় তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। সপুষ্পক উদ্ভিদকে ফল অনুযায়ী ২ ভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ
- ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ(Gymnospermae)
- গুপ্তবীজী উদ্ভিদ(Angiosperms)
ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ(Gymnospermae): যে সব উদ্ভিদের ফলহীন বীজযুক্ত বা বীজ ফল দ্বারা আবৃত থাকে না তাকে ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ বলে। ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ সপুষ্পক উদ্ভিদগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাচীনতম। যেমনঃ সাইকাস, পাইনাস, জুনিপার ইত্যাদি।
গুপ্তবীজী উদ্ভিদ(Angiosperms):যে সব উদ্ভিদের বীজ ফল দ্বারা আবৃত থাকে তাকে গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বলে। গুপ্তবীজী উদ্ভিদগোষ্ঠী হল সপুষ্পক উদ্ভিদগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও সরলতম উদ্ভিদগোষ্ঠী। যেমন : ধান,মটর ইত্যাদি।
বীজের মধ্যে উপস্থিত বীজপত্রের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে গুপ্তবীজী উদ্ভিদকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- একবীজপত্রী উদ্ভিদ (Monocotyledonae)
- দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ (Dicotyledonae)
একবীজপত্রী উদ্ভিদ (Monocotyledonae):যে সকল উদ্ভিদের বীজ শুধুমাত্র একটি বীজ থেকে আসে তাকে একবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে। যেমনঃ
- ধান ,
- গম,
- ভুট্টা ইত্যাদি
দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ (Dicotyledonae): যে সকল উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে বা দুটিবীজপত্র থেকে বীজ উৎপাদিত হয় তাকে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে যেমনঃ
- আম,
- ছোল,
- মটর ইত্যাদি
আরো কিছু উদ্ভিদের বর্ণনা দেওয়া হল
আবৃতবীজী উদ্ভিদ
আবৃতবীজী উদ্ভিদ হলো এমন উদ্ভিদ যাদের বীজ ফলের ভেতরে আবৃত থাকে। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় এবং প্রভাবশালী উদ্ভিদ গোষ্ঠী। যেমন:নারকেল, শাল, বট,গোলাপ, জবা,ধান, গম ইত্যাদি
ভেষজ উদ্ভিদ
ভেষজ উদ্ভিদ হলো এমন উদ্ভিদ যার বিভিন্ন অংশ, যেমন পাতা, কাণ্ড, শিকড়, ফুল, বীজ, বা ফল ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ তুলসী, হলুদ, আদা ইত্যাদি
গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ
হলো এমন উদ্ভিদ যাদের কাণ্ড কাঠিন্যপূর্ণ না হয়ে নরম ও নমনীয় থাকে। এদের উচ্চতা সাধারণত 2 থেকে 8 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের একাধিক শাখা-প্রশাখা থাকে এবং গোড়া থেকে বেশ কিছু কাণ্ড উঠে। যেমনঃ গোলাপ, জব্ বেলী, চম্প্, ধনে, পুদিনা
উদ্ভিদ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জানতে চাইলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন ধন্যবাদ 😊